চাঁদের মাটিতে গাছ!

অবশেষে চাঁদের মাটিতে জন্মাল গাছ। বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো চাঁদ থেকে আনা মাটিতে বীজ থেকে চারা গজাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এই গাছ পৃথিবীর মাটির তুলনায় একটু ধীরগতিতে বাড়ছে।

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদে বসবাস সম্ভব কি না সেই বিষয়েও গবেষণা চলছে। পৃথিবীর বাইরে কোথাও বসতি গড়তে হলে সেখানে প্রয়োজনীয় বস্তুগুলোর মধ্যে সবার আগে অক্সিজেন প্রয়োজন হবে।

এতদিন বিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন, চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানো একেবারেই অসম্ভব। কারণ চাঁদের মাটি গাছ জন্মানোর মতো ঊর্বর নয়। কিন্তু সে কথা যে সত্যি নয়, তা এখন প্রমাণিত হলো। নাসার কয়েকজন বিজ্ঞানী দেখালেন, চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানো এবং বেঁচে থাকা সম্ভব।

১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চন্দ্রাভিযানের সময় নমুনা হিসেবে চাঁদ থেকে পৃথিবীতে মোট ৩৮২ কিলোগ্রাম পাথর আনা হয়।

নাসা জানায়, মূলত অ্যাপোলো অভিযানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর পরীক্ষাটি করার কথা ভাবেন বিজ্ঞানীরা। ওই অভিযানে চাঁদের মাটি সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যই ছিল এটা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার।

সেই পাথর ভেঙে গুঁড়ো করা মাটিতেই গাছ গজানোর কাজটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার কয়েকজন বিজ্ঞানী। চাঁদ থেকে আনা মাটি থেকে মাত্র ১২ গ্রাম মাটি নিয়ে তাতে পানি ও সার যুক্ত করে গাছ জন্মিয়েছেন তারা।

গাছটির নাম অ্যারাবিডোপসিস থাইলিয়ানা। এটাই সেই বিরল গাছ, যা চাঁদের মাটিতে জন্মেছে। এই গাছ ফুলকপি, সরিষা ও ব্রোকলির মতো একই উদ্ভিদ পরিবারের অংশ।

সম্পূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদনটি জার্নাল অব কমিউনিকেশন বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি বীজই অঙ্কুরিত হয়েছে। তবে কিছু গাছ ভিন্ন রং ও আকার ধারণ করেছে। এবং তারা পৃথিবীর মাটির গাছের তুলনায় ধীর গতিতে বেড়েছে। গাছের বৃদ্ধি তুলনার জন্য গবেষকরা পৃথিবীতেও কিছু বীজ রোপ করেছিলেন।

এই গবেষণাটি ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছে নাসা। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যে মহাকাশ অভিযাত্রীরা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অভিযানে যাবেন, তাদের খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার গবেষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছর ধরে তারা দুটো প্রশ্নের পেছনে তাড়া করে ফিরেছেন। এক. চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানো সম্ভব কি না। ও দুই. ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষের বসবাস সম্ভব কি না। আর সেক্ষেত্রে এই গবেষণা কত দূর সাহায্য করতে পারে।

এসএইচ-২০/১৩/২২ (অনলাইন ডেস্ক)