অদ্ভুত এক রোগের নাম কুমিরের কান্না

ছোটবেলায় বাগধারায় কুমিরের কান্না অনেকেই পড়েছেন। এর অর্থ মায়াকান্না। পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় কবি ও ঔপন্যাসিক শেক্সপিয়ার মায়াকান্না বোঝাতে নিজের বিখ্যাত ট্র্যাজেডি ওথেলোতে ‌কুমিরের কান্না শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে এই নামে একটি রোগ রয়েছে। যে রোগটি সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না।

বিজ্ঞানের ভাষায় মায়াকান্না বলে কিছু নেই। মূলত শিকার করার সময় কুমির অনেক বড় করে হাঁ করার কারণে মুখের অভ্যন্তরে সাইনাসগুলোতে চাপ পড়ে।

আর এই চাপেই কুমিরের চোখের ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলো থেকে অনবরত পানি বের হতে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এ কারণে খাওয়ার সময়ই কুমির কান্না করে এবং চোখ থেকে পানি বের হতে শুরু করে।

অর্থাৎ, সুস্বাদু খাবার দেখলেই আমাদের জিবে যেমন পানি চলে আসে, ঠিক তেমনি কুমিরের আসে চোখে। ঠিক এ অবস্থা মানুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে বিরল এ রোগের নাম ক্রোকোডাইল টিয়ার সিনড্রোম বা ‘কুমিরের কান্না’ রোগ।

শুনতে একটু অবাক মনে হলেও এটিই সত্যি। মানুষের অনেক রহস্যময় রোগের মধ্যে এটি একটি। এই রোগটির সঙ্গে মানসিক ও নিউরোলজিক্যাল বিষয় সম্পর্কিত হওয়ায় এর রহস্য চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনো ভেদ করতে পারেনি।

কুমিরের কান্না রোগটি বেলস পলসি রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। বেলস পলসি রোগে আক্রান্ত রোগীর মুখ সাধারণত এক পাশ অবশ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে চোখ সাধারণত বন্ধ হয় না, খাবার চিবিয়ে খাওয়া যায় না, হাসতে গেলে মুখ একদিকে বেঁকে যায়।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনাম এ রোগ সম্পর্কে বলেন, নারীদের এ রোগ বেশি হয়।

তিনি আরও বলেন, বেলস পলসি রোগের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব হলো ‘কুমিরের কান্না’ রোগটি। এ রোগে আক্রান্ত হলে ফ্যাসিয়াল নার্ভটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বেলস পলসি রোগ নিরাময়ের সময় ফ্যাসিয়াল নার্ভ পুনর্গঠনের সময় পার্শ্ববর্তী টিয়ার গ্ল্যান্ড, ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডে কিছু ভৌতিক পরিবর্তন হয়, যার কারণে মানুষেরও কুমিরের মতো খাবার খেতে, পানি পান করতে গিয়ে চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে থাকে।

এসএইচ-০১/২৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক)