মৃত সন্তানকে নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটল মা!

স্নেহ, অনুভূতি যে শুধু মানুষেরই নয়, তা যেন প্রমাণ হলো আরও একবার। আর এ দৃশ্য দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারলেন না প্রত্যক্ষদর্শীরা। সন্তানের দেহে প্রাণ নেই। কঠিন এ সত্যিটা যেকোনো মায়ের পক্ষেই মেনে নেওয়া কঠিন। যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করেও মানবসমাজে অনেক মা এই সত্যিকে মেনে নিতে পারেন না। আর জঙ্গলের কোনো বন্যপ্রাণীর পক্ষে তো নিজের সন্তানকে হারানোর সত্যিটা বোঝা আরও কঠিন।

মৃত বাচ্চাকে কোনোভাবেই আলাদা করতে নারাজ এক মা হাতি। মৃত শাবকটিকে শুঁড়ে তুলে মাইলের পর মাইল হাঁটল প্রাণীটি। এমন ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ভারতের ডুয়ার্স অঞ্চলের বাসিন্দারা। শনিবার (২৮ মে) ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের আমবাড়ি চা-বাগানে মৃত্যু হয় এক হাতির শাবকের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রেড ব্যাংক চা-বাগানের দিকে রওনা দেয় হাতিগুলো। দলটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টি হাতি ছিল।

আমবাড়ি চা-বাগানের বাসিন্দারা লক্ষ করেন, দলের সব হাতি রেড ব্যাংক চা-বাগানের দিকে রওনা দেয়। তবে একটি হাতি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছে। দু-পাশে চাগাছ থাকায় হাতিটির গতিবিধি বুঝে উঠতে পারছিলেন না বাসিন্দারা। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা বুঝতে পারেন হাতিটির সঙ্গে একটি সদ্যোজাত বাচ্চাও রয়েছে। তবে সেটি জীবিত না, মৃত। যাকে নিয়ে ব্যস্ত মা হাতি। বারবার বাচ্চাটিকে আদর করছে সে। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পান মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে রেড ব্যাংক চা-বাগানের পথ ধরেছে মা হাতিটি।

প্রায় আট কিলোমিটার পথ যেতে যেতে বাচ্চাকে মাটিতে কখনো রাখছে আবার কখনো আদর করছে সে। এভাবেই রেড ব্যাংক চা-বাগানে গিয়ে দাঁড়ায় মা হাতিটি। সেখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অপেক্ষায় ছিল দলের বাকি সদস্যরা।

বাচ্চাসহ মা হাতিটিকে ঘিরে দাঁড়ায় তারা। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের বনকর্মীরা। সকাল গড়িয়ে দুপুর, বিকেলে মৃত সন্তানকে আগলে দাঁড়িয়ে থাকে মা হাতি। যা দেখে চোখের পানি সামলে রাখতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াড রেঞ্জের কর্মকর্তা শুভাশিস রায় জানান, যতক্ষণ-না মা তার মৃত সন্তানকে রেখে চলে যায়, ততক্ষণ অপেক্ষা করাই নিয়ম। তারপরই হাতির শাবকের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর সদ্যোজাত হাতির শাবকের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। গত বছরও এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন বৈকণ্ঠপুর বন বিভাগের কর্মীরা।

গৌরিকোন এলাকায় মৃত শাবককে ঘিরে তিন দিন দাঁড়িয়ে ছিল ১০টি হাতির একটি দল। তিন দিন পর হাতির দলটিকে সরিয়ে শাবকের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেন বনকর্মীরা।

এসএইচ-০৩/২৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক)