পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এক মুসলিম নারী

আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় মরক্কোর ফেজে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউনেস্কো এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম ও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাতিমা আল-ফিহরি বিশ্বনন্দিত একজন মুসলিম নারী। যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় সাড়ে এগারোশ বছর আগে ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তার হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে, যা এখন পর্যন্ত একটানা চালু আছে।

ফাতিমা আল-ফিহরিয়ার প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরুতে মসজিদ ছিল। পরবর্তী সময়ে মুসলিম ইতিহাসেই এই প্রতিষ্ঠানটি আধ্যাত্মিক এবং শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে নেতৃত্ব দেয়। ১৯৬৩ সালে মরক্কোর সরকার আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে তার আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় পদ্ধতির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।

ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল-ফিহরি একজন আরব্য মহীয়সী মুসলিম নারী। বংশপরম্পরায় তিনি তিউনিশিয়ার ও কাইরাওয়ান শহরের প্রতিষ্ঠাতা উকবা ইবনে নাফে আল-ফিহরি আল-কুরাইশিয়া। তাদের পারিবারিক নামের কুরাইশিয়া অংশ থেকে ধারণা করা হয় তারা ছিলেন কুরাইশ বংশের উত্তরাধিকারী। তিনি তিউনিশিয়া ও কাইরাওয়ান শহরের অতীত স্মৃতি। মরক্কোর ফেজ শহর এবং তিউনিশিয়া ও মরক্কোর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা এক ব্যক্তিত্ব।

আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ মরক্কো। এটি দুই সাগরের দেশ বলেও পরিচিত। দেশটির পূর্বে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। দক্ষিণের সীমানা নিয়ে চলছে বিরোধ।

মরক্কো একমাত্র আফ্রিকান দেশ, যা আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য নয়। সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশটি আরব লিগ, ওআইসি, গ্রুপ অব ৭৭ ইত্যাদি জোটের সদস্য। আরবি শব্দ মরক্কোর অর্থ ‘পশ্চিমের রাজ্য’। এই অঞ্চল আল-মাঘরেব বা ‘দূরতম পশ্চিম’ নামে পরিচিত। মরক্কো নামটি এসেছে দেশটির আগের রাজধানী মারাক্কেশ থেকে। এর অর্থ স্রষ্টার দেশ।

মরক্কো উত্তর আফ্রিকার একমাত্র দেশ, যেখানে কখনো অটোমান শাসকদের রাজত্ব ছিল না। ১৯১২ সালে ফরাসি ও স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মরক্কোকে ভাগ করে নেয়। দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৫৬ সালে। অর্থনৈতিক প্রগতি ও আধুনিকতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে মরক্কো একটি মডেল।

সিআইএ দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের সবশেষ তথ্যমতে (জুলাই ২০২০), মরক্কোর মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৫৪। দেশের নাম দ্য কিংডম অব মরক্কো। রাজধানী রাবাত। আয়তন ৭ লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার।

প্রধান ভাষা আরবি। পাশাপাশি সেখানে ফ্রেঞ্চ ও স্প্যানিশ ভাষাও প্রচলিত। প্রধান ধর্ম ইসলাম। সিআইএ দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্যমতে, মরক্কোর মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ সুন্নি মুসলমান। দেশটির মুদ্রার নাম মরোক্কান দিরহাম। প্রধান রফতানি খনিজ দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ থেকে তৈরি খাদ্য ও ফল।

খ্রিষ্টপূর্ব আট হাজার বছর আগে মরক্কোতে জনবসতি গড়ে ওঠে। তখন দেশটি অনুর্বর আর বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক মরুভূমি ছিল। বারবার, ফোনেশীয়, ইহুদি ও সাব-সাহারার লোকজন ক্রমান্বয়ে বসতি গড়ে এখানে।

ফোনেশীয়রা ছিল বণিক জাতি, প্রাচীনকালে তারাও কিছুটা প্রাধান্য বিস্তার করে। ফলে রোমানদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চম শতকে রোমানরা সরে গেলে পূর্ব জার্মান বংশোদ্ভূত ভেন্ডাল আর গ্রিক বাইজেন্টাইনরা পর্যায়ক্রমে দেশটি শাসন করে।

দামেস্কের উমাইয়া খলিফার আদেশে উকবা ইবনে নাফি (রহ.)-এর নেতৃত্বে মরক্কোতে অভিযান চালানো হয়। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে তারা দেশটিতে প্রবেশ করে। দীর্ঘ ১০০ বছরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও কলোনিকে একত্র করে একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। ইসলাম এখানে নিয়ে আসে উন্নত সংস্কৃতি ও উন্নত জীবনাচরণ। উন্নত আরবীয় সংস্কৃতিতে ছাপিয়ে যায় বারবার আর যাযাবর জীবন।

১৬৬৬ সালে বর্তমান বাদশাহর পূর্বপুরুষরা আসার আগে কয়েকশ বছরে দেশটিতে নানা উত্থানপতন হয়। আব্বাসি ও উমাইয়া খিলাফতের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রাজত্বের উদ্ভব ঘটে। শেষের দিকে স্পেনে মুসলমানদের পতন প্রভাবিত করে দেশটিকে। খ্রিষ্টান আগ্রাসনের কবলে পড়ে মরক্কো। আগ্রাসনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ১৬৬৬ সালে আলউতি রাজবংশ (বর্তমান রাজবংশ) দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

মরক্কো ১৬টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলোকে ৬২টি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে। দেশটিতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য ইউনেস্কো দেশটিকে ২০০৬ সালে পুরস্কৃত করে।

এসএইচ-১০/২২/২২ (অনলাইন ডেস্ক)