ভোট আসে, ভোট যায়। একের পর এক ভোট পেরিয়ে যেতে দেখেছে গ্রামের মানুষ। বামফ্রন্টের শাসনকাল থেকে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। সবমিলিয়ে প্রায় বিশ বছরের বেশি সময় কেটে গেছে, কিন্তু তবুও গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি এখনো পাকার মুখ দেখেনি।
গ্রামের মানুষ বলছেন মুসলিম প্রধান গ্রাম, তাই নাকি রাজনৈতিক নেতারা ভ্রুক্ষেপ করেন না। অবহেলায়, অনাদারে বছরের পর বছর মাটির রাস্তা হয়েই পড়ে রয়েছে।
বেহাল রাস্তার ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলার। এই জেলার বড়ঞার বাহাদুরপুর থেকে বেলগ্রাম অব্দি যাওয়ার প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি এই রাস্তাটি প্রায় ২০ বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বর্ষা আসলে বন্ধ হয়ে যায় যাতায়াত। তারই মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকেই পড়ে যান, শরীরেও আঘাত পান। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে ওইভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
গ্রামবাসীর দাবি গ্রামটি মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার জন্যই নাকি প্রশাসন কোনো গুরুত্ব দেয় না। ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু ভোট মিটে গেলেই তারাও ভুলে যান।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের বর্তমান তৃণমূল সরকার মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও এই রাস্তা তৈরীর ব্যাপারে কেন এত উদাসীন?
যদিও রাস্তাটি পুনরায় সংস্কারের আশায় দিন গুনছেন বেলগ্রামের মানুষজন। প্রায় ৫০০০ মুসলিম পরিবারের বাস এই বেলগ্রামে।
এই রাস্তার উপর দিয়েই বেলগ্রাম সহ ময়ুরাক্ষী নদীর ওপারের প্রায় আরও পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের থানা থেকে হাসপাতাল, বাজার-ঘাট সমস্ত কিছুর জন্য প্রধান এই রাস্তা।
কথিত আছে, আগে এই রাস্তাটি ছিল বাদশাহী সড়ক, অর্থাৎ মুর্শিদাবাদের রাজা, নবাবরা নাকি এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেন। পরবর্তিতে বাদশাহী সড়কের পাশ দিয়ে পিচের রাস্তা হলেও এই রাস্তাটি সেই আমল থেকেই এমন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়ে গেছে।
বেলগ্রামের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ শেখ জানান ‘এই গ্রামে পাঁচ হাজার লোকের বাস। তারপরেও গঙ্গার ওপার থেকে আরো কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করে। রাস্তায় পানি হয়ে গেলে কাদায় আর কেউ যাতায়াত করতে পারে না। স্লিপ কেটে অনেকেই সাইকেল থেকে পড়ে যায়, পা ভেঙে যায়। অথচ কেউ খেয়াল করে না ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) সাহেব নিজেও জানেন এই রাস্তাটা খারাপ কিন্তু তিনিও কোনো উদ্যোগ নেন না। তার অভিমত বেলগ্রাম মুসলমান গ্রাম বলে ছোট করা হয়। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ সবাই বলে করে দেবো। কিন্তু ভোট হয়ে গেলে আর কিছুই হয় না।’
স্থানীয় বাসিন্দ খিরমত শেখ জানান, ‘মুসলমান গ্রাম বলে ওরা (প্রশাসন) জেনেশুনে এই রাস্তাটা করছে না। গত ২৫ বছর হয়ে গেল এভাবেই চলছে। এই গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বসবাস। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, চাষবাসের সাথে যুক্ত। এই রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে আমাদের খুব অসুবিধা হয়। আমরা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও সাহেবকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো কাজই হয়নি।’
এসএইচ-০৬/১৫/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)