বিয়ের পরও আলাদা থাকছেন

বেশ কয়েক বছর হয় বিয়ে করেছেন হিরেমি ও হিদেকাজো। তারপরও আলাদা বাড়িতে থাকেন এই জাপানি দম্পতি। দুজনের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। যে যাঁর বাড়িতে নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করেন তাঁরা। সপ্তাহে দুই-এক দিন সুবিধাজনক সময়ে দেখা করেন। নিজেদের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত পছন্দ নিয়ে বেশ ভালো আছেন তাঁরা। সামাজিক ও আইনগতভাবে একে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীলও এই দম্পতি। বর্তমানে জাপানে অনেক দম্পতির মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ধরনের বিয়ে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেপারেশন ম্যারেজ’।

অনেক জাপানিই মনে করেন, বিয়ে মানেই নিজেদের মতো করে চলার স্বাধীনতা চলে যাওয়া। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার কারণে নিজেদের পছন্দকে ছাড় দিতে হয় বলে মনে করেন অনেক দম্পতি। এ কারণে অনেকের মধ্যেই দেখা যায় বিয়েভীতি। অনেক জাপানিই তাই সেপারেশন ম্যারেজের দিকে ঝুঁকছেন। সামাজিক ও আইনগতভাবে বিয়ে করেও যে যাঁর বাড়িতে থাকছেন তাঁরা। ফোনে দুজন দুজনের খোঁজখবর রাখছেন। সপ্তাহে এক বা দুই দিন দেখাও করছেন।

এসব দম্পতি মনে করেন, এ ধরনের প্রথাবিরোধী বিয়ে তাঁদের দাম্পত্য কলহ, ভুল–বোঝাবুঝি থেকে দূরে রাখছে। সংসারে বেশি সময় দিতে হচ্ছে না বলে নিজেদের ক্যারিয়ারেও মনোযোগ দিতে পারছেন তাঁরা।

সেপারেশন ম্যারেজ’ রাজধানী টোকিওসহ জাপানের বেশ কিছু শহরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু সামাজিক কারণ। প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দম্পতিদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি। জাপানের তরুণ প্রজন্ম যেখানে অনেকটাই বিয়েবিমুখ, সেখানে সেপারেশন ম্যারেজকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

জাপানিরা মনে করেন, এই বিয়ের মাধ্যমে দম্পতিরা স্বাধীন থাকলেও পারিবারিক বন্ধনটা অন্তত টিকে থাকবে। আলাদা বসবাস করলেও একে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল ও সমব্যথী থাকবেন তাঁরা। একসঙ্গে না থাকার কারণে সাংসারিক তিক্ততাও অনেকটাই কম হবে।

সেপারেশন ম্যারেজের জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ আছে। বিবাহিত জীবনে একসঙ্গে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী নিজেদের জন্য আলাদা করে সময় বের করতে পারেন না। অনেকেই নিজের শখ ও পছন্দের কাজ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন। কিন্তু আলাদা থাকলে তাঁরা নিজের জন্য সময় বের করতে পারেন, বিয়ের আগের জীবনের মতো নিজেদের পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন। ফলে, তাঁরা একটি সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারছেন।

এমনকি বার্ধক্যে চাইলে আবার একসঙ্গে সঙ্গী হিসেবেও থাকতে পারবেন তাঁরা। জাপানের এক সরকারি জরিপে উল্লেখ করা হয়, দেশটিতে ৩৫ শতাংশের বেশি বিয়ে বিচ্ছেদে গড়ায়। এতে করে প্রথাগত বিয়ের টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার। বিয়েপ্রথাকে টিকিয়ে রাখতে ‘সেপারেশন ম্যারেজ’ পরিপূরক হতে পারে বলে মনে করেন দেশটির সমাজবিজ্ঞানীরা।

এসএইচ-০১/১২/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)