মুক্তিযুদ্ধ ডিসেম্বরে নতুন মাত্রা লাভ করে

ঐতিহাসিক ২ ডিসেম্বর। একাত্তরে এ দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার। এ দিনই বীরদর্পে লড়াই করে জাতির অহংকার মুক্তিসেনারা আমাদের বিজয় নিশ্চিতের সূত্রপাত করেছিলেন। এ দিনের ঘটনাপ্রবাহ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক সময়ের স্বপ্ন বাস্তব রূপায়নের পথে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। বলাবাহুল্য, জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পঁচিশে মার্চের বিভীষিকাময় রাতের পর থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, ডিসেম্বরে তা নতুন মাত্রা লাভ করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহসিকতা আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিচালিত লড়াইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকহানাদার বাহিনী। সম্মুখ সমরে বীর মুক্তিসেনাদের কাছে পরাজয়ের ভয়ে ভীত হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে সাহায্যের জন্য চিঠি পাঠান। এতে একটুও কমেনি বা দমে যায়নি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অগ্রযাত্রা। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণে লড়তে থাকেন তারা। একাত্তরের ডিসেম্বরে ধর্ম-বয়স নির্বিশেষে মানুষ দেশকে শত্রুমুক্ত করার সংগ্রামে আরও যুক্ত হন। গোটা জাতিই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসবিদরা তাই এ যুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেন। যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম তার ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “২ ডিসেম্বর আমার কাছে এই মর্মে একটি বার্তা পৌঁছে যে, সিলেট এবং ময়মনসিংহ জেলার মুক্ত-অঞ্চলে পাকা ধান কাটার অপেক্ষায় আছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী এই ধান অল্প দামে ক্রয় করে সীমান্তের ওপারে ভারতে চালান করছে। বিনিময়ে লবণ, কেরোসিন তেল ইত্যাদি নিয়ে গিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। সংবাদটি পেয়েই আমি অর্থ ও বাণিজ্য সচিবকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি।”

উক্ত গ্রন্থে তিনি আরো উল্লেখ করেন,“ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছিল। এখান থেকে মিত্রবাহিনীর সমস্ত অগ্রযাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হতো। বাংলাদেশ এবং ভারতীয় বাহিনীর কোন্ ইউনিট কোথায় যুদ্ধরত, কোন্ কোন্ শহর দখল করছে, ইত্যাদি তথ্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় মনিটর করা হতো। প্রতিরক্ষা-সচিব সামাদ, সচিব নূরুল কাদের ও আমি ঘন ঘন গিয়ে খবর নিতাম। অনেক সময় গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার সাথে থাকতেন।

এর মধ্যে প্রতিদিনই আমাদের একবার করে ইস্টার্ন কমান্ডের হেডকোয়ার্টার ফোর্ট উইলিয়ামে যেতে হত। ওখানে বিশেষ স্থাপনাগুলো এবং গোপন অফিস সবই মাটির নিচে; বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না। অপরপক্ষে আমাদের যোগাযোগের মূলকেন্দ্র বাঙালি মেজর জেনারেল বি.এন. সরকার, যাকে ঐ সময় ‘সিভিল এফেয়ার্স লিয়াজোঁ অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন ইস্টার্ন কমান্ডের ‘ডিরেক্টর অব অপারেশন্স’; অত্যন্ত অমায়িক ছিলেন ভদ্রলোক।

বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হলে জেনারেল সরকার প্রথম ভারতীয় মিলিটারি এটাশে নিযুক্ত হয়েছিলেন। আমাদের অন্যান্য অফিসাররা যোগাযোগ করতেন কর্নেল মরিস, লে. কর্নেল বাত্রা প্রমুখের সঙ্গে। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে আমাদের সামরিক পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছিল যাতে আমাদের চলাচলে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।

এসএইচ-০১/০২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)