‘মৃত’ ব্যক্তিকে ২০ মাস পর জীবিত উদ্ধার

জীবিত

গাইবান্ধায় ওয়াসিম জাহান তৌহিদ নামের এক যুবককে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে আদালতে মামলা করেছিলেন তার বড় ভাই মানজুমুল হুদা নাহিদ। তবে প্রায় ২০ মাস পর ‘মৃত’ তৌহিদকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

শনিবার বিকেলে গাইবান্ধা পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন পিবিআই পুলিশ সুপার এ আর এম আলিফ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ডোমেরহাট গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন ওয়াসিম জাহান তৌহিদ। এ ঘটনায় বড় ভাই নাহিদ বাদী হয়ে তার ছোট ভাই তৌহিদকে হত্যার পর গুম করার অভিযোগ এনে তৌহিদের স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ সাতজনকে আসামি করে গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।

পরের বছর ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। এক বছর আট মাস পর গত ১৯ আগস্ট গাজীপুরের মোগরখালের টিএনজেড ফ্যাক্টরি থেকে তৌহিদকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি জানান, জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ডোমেরহাট ইউনিয়নের সূবর্ণদহ গ্রামের জাহিদুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতি বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নিজপাড়া গ্রামের মো. ওয়াসিম জাহান তৌহিদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে জান্নাতি গর্ভবতী হলে স্থানীয়দের চাপে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। পরে ওয়াসিম প্রতিনিয়ত যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন জান্নাতির পরিবারের কাছে। তারা যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে জান্নাতিকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন ওয়াসিম। এরপর থেকে বন্ধ করে দেন তাদের ভরণ-পোষণও।

২০১৯ সালে সন্তানের ভরণপোষণ দাবি করে জান্নাতি বেগম সুন্দরগঞ্জ পারিবারিক জজ আদালতে স্বামী ওয়াসিম জাহান তৌহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে মামলার দায় এড়াতে তৌহিদ আত্মগোপনে যান। মামলা থেকে বাঁচতে তার পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে গা-ঢাকা দিয়ে গাজীপুরে অবস্থান নিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন।

একই বছরের ৮ ডিসেম্বর তার বড় ভাই নাজুমুল হুদা নাহিদকে দিয়ে (বাদী বানিয়ে) স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আমলি আদালতে (সুন্দরগঞ্জ) অপহরণ ও হত্যা মামলা করেন।

গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আদালত তৌহিদকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক বাদীর বাড়িতে গিয়ে আঁচ করতে পারেন, পরিবারে নেই কোনো শোক-আহাজারি। এই সূত্র ধরেই মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পিবিআই।

তৌহিদকে উদ্ধারের পর শনিবার বিকেলে গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উপেন্দ্র চন্দ্র দাসের আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এসএইচ-১৮/২১/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)