জরায়ুমুখের ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

জরায়ুমুখের ক্যান্সারের

জরায়ুমুখ ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১৫-৪৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশের প্রায় ২ থেকে ২০ বছর আগেই একজন নারী এ রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন।

তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন না বলে এই রোগের বিস্তার বেশি।

তবে উন্নত দেশের নারীরা এবিষয়ে সচেতন এবং উন্নত জীবনযাপনের কারণে অনেকটাই এই রোগ থেকে নিরাপদ। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য ‘পেপস স্মেয়ার টেস্ট’ রয়েছে, যা উন্নত দেশের নারীরা দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করতে পারেন, যা অনুন্নত দেশে গ্রহণ করতে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে।

এই ক্যানসারটিকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার বলে কেন? জরায়ুর ক্যান্সার নয় কেন?

জরায়ু বা ইউটেরাস নামক অঙ্গটির ভেতরে আমরা প্রত্যেক মানুষ জন্ম নিই। পুরো জরায়ু থেকে জরায়ুমুখটি একটু ভিন্ন প্রকৃতির। যেহেতু এই অংশের ক্যান্সারটি নরীদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, তাই একে চিকিৎসকরা আলাদা করে জরায়ুমুখের ক্যান্সার বলে থাকেন।

জরায়ুমুখের ক্যান্সারে একজন নারী আক্রান্ত হন যে কারণে

জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে কতগুলো আর্থসামাজিক এবং কিছু ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের বেলায় যেখানে, মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা বেশিরভাগই একটু নিম্ন পর্যায়ের থাকে, সেসব দেশে আমরা প্রধানত দায়ী করি বাল্যবিবাহকে।

খুব অল্প বয়সে যদি মেয়েদের বিয়ে হয় এবং অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে যদি সন্তান হয়, যদি বেশি সন্তান হয়, সন্তান ঘন ঘন হয়- তাহলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলো অন্যতম প্রধান কারণ। এর সাথে রয়েছে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব। বিশেষ করে মাসিকের সময় ব্যবহার করার বিষয়গুলো যদি জীবাণুমুক্ত না হয় তবে সমস্যা হয়। এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্নতাও দায়ী। এর সাথে আসে অপুষ্টি।

অপুষ্টি একটি বিষয় যেটা অন্য কারণগুলোকে উৎসাহিত করে। আরেকটি বিষয় রয়েছে, সেটি হলো নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে একাধিক সঙ্গীর সাথে যে মেলামেশা- এটি একটি বড় কারণ। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিষয়টি আছে। তবে উন্নত বিশ্বে এই হারটা বেশি।

আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো, একটি ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ( এইচপিভি)। এই ভাইরাসকে বলা যায় প্রধান কালপ্রিট। অন্য যে কারণেই হোক না কেন এটি একটি প্রধান কারণ। এই ভাইরাসের সংক্রমণ যদি বারবার হয়, তাহলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

বাল্যবিবাহ জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। কাজেই কন্যাসন্তানকে অল্প বয়সে বিয়ে না দেওয়া। তাকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলা। এরপর অল্প বয়সে বাচ্চা না নেওয়া, বেশি সন্তান না নেওয়া—এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার কথা চিকিৎসককে বলতে হবে। নারীদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

এটি প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার হয়েছে। সেই ভ্যাকসিন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। সরকার চেষ্টা করছে, ইপিআইর মধ্যে বিষয়টিকে নিয়ে আসার জন্য। এখন বলি, কোন বয়সের মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য? সাধারণত ৮ থেকে ১৩ বছর সময়টা টিকা দেওয়ার জন্য বেশি প্রযোজ্য। অর্থাৎ বিয়ে হওয়ার আগে বা শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার আগের সময়টায় এই ভ্যাকসিন দিলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়।

আরএম-১৯/০৬/১২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)