উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগরই বয়স ৪৫ এর নিচে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেরই একটা করে কলা খাওয়া উচিত। কারণ এই ফলটির ভিতরে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাসিয়াম, যা শরীরে প্রবেশ করার পর সোডিয়ামের প্রভাবকে কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক সমস্যাও বাগে চলে আসে। যেমন ধরুন-
হাড় শক্তপোক্ত হয়
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত একটা করে কলা খাওয়া শুরু করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হতে সময় লাগে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে অস্টিওআথ্রাইটিস মতো বোন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।
দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটে
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে বাস্তবিকই কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে কলাতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আরও নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে রেটিনার ক্ষমতাও এতটা বৃদ্ধি পায় যে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা কোনও ধরনের চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
সার্বিকভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে
বছরের শেষেও অফিসে এমন কাজের চাপ যে ক্লান্তি ঘরির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে বাড়তে মাত্রা ছাড়িয়েছে? ফিকার নয়! এমন পরিস্থিতিতে একটা কলা খেয়ে নেবেন সব সময়। তাহলেই দেখবেন অনেক চাঙ্গা লাগবে। কারণ ক্লান্তি দূর করতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই কারণেই তো অ্যাথেলিটদের রোজের ডেয়েটে আর কিছু থাকুক না থাকুক কলা থাকেই!
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
কলা খাওয়ার পর যদি কলার খোসা মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে একাদিক যেমন ত্বকের রোগের প্রকোপ কমে, তেমনি স্কিনের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। আসলে কলার খোসার ভিতরে থাকা একাধিক উপাকারি উপাদান এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কলার খোসায় থাকা উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিডও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, কলার ভিতরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে।
স্ট্রেস কমে চোখে পরার মতো
বেশ কিছু গবেষণায দেখা গেছে, রোজের ডায়েটে কলাকে জায়গা করে দিলে শরীরে ট্রাইপটোফিন নামক একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে স্ট্রেস লেভেল তো কমেই, সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তাই আজকের যুবসমাজের সিংহভাগই যখন স্ট্রেস নামক সমস্যার শিকার, তখন নিয়মিত কলা খাওয়া প্রয়োজন যে বেড়েছে, সে বিষয়ে কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই!
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
শরীরের সচলতা বজায় রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন পরে শরীরের। আর এইসব উপাদানের যোগান শরীর পায় খাবারের মাধ্যমে। সমস্যাটা হল আজকের প্রজন্ম এতটাই ব্যস্ত যে তাদের হাতে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করার সময় নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার কারণে নানাবিধ রোগ এসে বাসা বাঁধে শরীরে। এমন পরিস্থিতি কলা কিন্তু দারুন কাজে আসতে পারে। কিভাবে? এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এবং মিনারেল। সেই সঙ্গে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলেটের মতো উপাদান, যা শরীরকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে ঠিক সময় খাবার খাওয়া সুযোগ না পেলে ২-৪ টা কলা খেয়ে নিতে ভুলবেন না যেন!
টক্সিক উপাদানেরা সব বেরিয়ে যেতে শুরু করে
শুনতে আজব লাগলেও এ কথা ঠিক যে শরীরের ইতি-উতি উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে দেহের প্রতিটি অঙ্গকে চাঙ্গা রাখতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই ফলটির ভিতরে উপস্থিত প্রেকটিন নামক একটি উপাদান, শরীরের প্রবেশ করা মাত্র ক্ষতিকর উপাদানদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে। ফলে রোগমুক্ত শরীরের অধিকারী হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না।
অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূরে পালায়
কলায় রয়েছে বিপুল পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা এমন রোগে ভুগছেন, তারা আয়রন ট্য়াবলেটের পাশাপাশি যদি নিয়ম করে কলা খেতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মিলতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
কলার শরীরে পটাশিয়াম ছাড়াও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর কম খেলে যে ওজনও কমে, সে কথা কার না আজানা বলুন! প্রসঙ্গত, ফাইবার কনস্টিপেশনের মতো রোগ সারাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না
কলা খাওয়া মাত্র শরীরে কম-বেশি ৩ গ্রামের মতো ডায়াটারি ফাইবারের প্রবেশ ঘটে। যার প্রভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না। এই কারণেই তো টাইপ ১ এবং ২, দুই ধরনের ডায়াবেটিস রোগীদেরই এই ফলটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আর যদি এই মারণ রোগ থেকে দূরে রাখতে হয়, তাহলে কিন্তু নিয়মিত এই কলা খাওয়া মাস্ট!
আরএম-২৫/১৩/১২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)