ঠাণ্ডা বা সর্দি হলে চিকিৎসার অভাবে তা নিউমোনিয়া রোগে মোড় নিতে পারে। সর্দি লাগার শুরুতে প্রাথমিক প্রতিকার নিশ্চিত করা গেলে পরবর্তী জটিলতা থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়। ২-৩ সপ্তাহের বেশি ঠাণ্ডা বা সর্দি দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। সর্দি পরবর্তী শ্বাসকষ্ট, হৃদকম্পন বেড়ে গেলে বা জ্ঞান হারানোসহ কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে।
তবে সর্দি নিরাময়ে ঘরে বসেই সহজসাধ্য কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আরাম পাওয়া যায়।
রসুন
রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন নামের যৌগ যার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। খাবারে রসুনের সম্পূরক যোগ করা হলে ঠাণ্ডা সর্দির লক্ষণগুলির তীব্রতা কমানো সম্ভব। কিছু গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, রসুন আপনাকে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ করুন
তরল খাবার গ্রহণ আপনার বদ্ধ থাকা নাক খুলে দিতে সহায়তা করে। ফলের জুস, ভেষজ চা কিংবা আদার রস খেতে পারেন। মুরগীর স্যুপও হতে পারে দারুণ বিকল্প। গবেষণা থেকে দেখা গেছে, সবজি সহযোগে মুরগীর স্যুপ শরীরের রক্তে নিউট্রোফিলস নামের শ্বেত রক্তকণিকার চলাচলের গতি ধীর করে যা শরীরের যেসকল জায়গায় জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য দরকার সেসব জায়গায় তার উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয়। ফলাফল দ্রুততর সময়ে স্বস্তিদায়ক মুক্তি।
গরম বাষ্প নাক দিয়ে টানা
ঠাণ্ডায় বন্ধ হয়ে যাওয়া নাক দিয়ে গরম বাষ্প বা ভাপ টেনে জ্যাম ছাড়িয়ে নিতে পারেন। উষ্ণ পানির একটি পাত্রের মাঝে আপনার মাথা ধরে রাখুন এবং নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গরম বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে টেনে নিন। তবে সাবধান, বেশী গরম বাষ্প টানতে গিয়ে নাক পুড়ে ফেলবেন না যেন!
বাষ্প পদ্ধতিটি ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ থেকে ২ বার এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে নাকের বদ্ধাবস্থা দূর হয়ে আলগা হয়, কাশি কমায় এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
লবন পানি দিয়ে কুলকুচি করুন
কুসুম গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে কুলি করলে সাময়িক আরাম পাবেন খসখসে গলা থেকে। গলা খুসখুসানি থেকে রক্ষা পেতে চা দিয়েও কুলকুচি করতে পারেন, ভালো হয় যদি তাতে একটু মধুও থাকে।
লেবু, দারুচিনি ও মধু’র মিশ্রণ
শীতের সময়ের সাধারণ ঠান্ডা-সর্দির উপশমের আরেকটি কার্যকর উপকরণ হলো লেবু, দারুচিনি আর মধু’র মিশ্রণ। এই তিনের মিশ্রণে তৈরি সিরাপ ঠান্ডা-কাশিতে খুবই ভালো কাজে দেয়। আধা চামচ মধুতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং তার সাথে এক চিমটি দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে এই সিরাপ তৈরি করা যায়। দিনে দু’বার সিরাপটি গ্রহণ করলে সাধারণ ঠান্ডা-কাশির উপশম হয়।
দুধ ও হলুদ
বাড়িতে হলুদের গুড়ো নেই এমন বাড়ি বাংলাদেশে পাওয়া দুষ্কর। আমরা অনেকেই জানি হলুদের রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কাশির বিরুদ্ধে যুদ্ধে উষ্ণ দুধে অল্প হলুদের মিশ্রণ জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায়। রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ মিশ্রিত এক গ্লাস উষ্ণ দুধপান ঠাণ্ডা ও কাশি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
ক্র্যানবেরি অথবা কমলার জুস
ঠাণ্ডা বা সর্দির সংক্রমণে ডাক্তারগণ প্রায়ই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জুস যেমন ক্র্যানবেরি কিংবা কমলার জুস পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। লেবুর রসও একইভাবে ভাইরাস বিরোধী যুদ্ধে সফলভাবে কাজ করে যাতে ঠাণ্ডা বা কাশি নিরাময় সহজতর হয়।
আদার রস ও তুলসি পাতা
আদার রসের সাথে তুলসি পাতা পিষে মিশিয়ে তার সাথে সামান্য মধু যোগ করলে তা ঠান্ডা ও সর্দি-কাশি নিরাময়ের বেশ ভালো একটি কার্যকরী ওষুধ হিসাবে কাজ করে।
মধু
রোগ নিরাময় ও ভাইরাস বিরোধী শক্তিশালী গুণের কারণে মধু সর্বজন প্রিয়। ঠান্ডা ও শুষ্ক খুসখুসে গলার চিকিৎসায় এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠান্ডা বা সর্দি সৃষ্টিকারী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ চামচ মধু খেলে ঠান্ডা-সর্দির উপশম সম্ভব।
আরএম-০৪/১৯/১২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)