ব্যথার ওষুধ সেবনের নিয়ম

ব্যথার ওষুধ

শরীরে যেকোনো ব্যথা অনুভূত হলেই আমরা বাসার পার্শ্ববর্তী ফার্মেসির দোকানে চলে যাই। এই ওষুধ শরীরে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে কোনো চিন্তাও মাথায় আসছে না। ব্যথা হলেই ফার্মেসির দোকান থেকে কিনে ‘ব্যথার ওষুধ’ সেবন করে চলেছি।

কিন্তু ওষুধ সেবনে সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা ব্যথারও কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। এবং এর সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই ওষুধ সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নিতে হবে।

ওষুধের উপর লেবেন পড়ে

নিন এই ওষুধ সেবনের নিয়মগুলোও জেনে নিন। ব্যথার ওষুধ আসে দুই প্রকারে। এসিটোএমিনোফেন (প্যানাডল, টাইলেনল) এবং নন-স্টেরয়ডেল এন্টি ইনফ্লামেটরী (NSAIDS) ড্রাগ। দু’টোই ব্যথা কমায়।

জ্বরও কমায়। NSAIDS এর মধ্যে আছে ইবুপ্রুকেন (এডডিল), এসপিরিন, ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম (এলিড)। ওষুধ নানারূপে বডি, ক্যাপসুল, জেলক্যাপ, তরল ইত্যাদি। ব্যথা নিবারক ওষুধের নিরপদ হওয়ার ব্যপারটা রোগীর বয়সের উপরও নির্ভর করে।

বছর কয়েক আগে পিতা-মাতারা জ্বরের জন্য বাচ্চাদের দিয়ে দিতেন বেবি এসপিরিন কিন্তু পরে জানা গেলো রেই’স সিনেড্রাম। এসপিরিনের বিষময় ফলে গুরুত্বর অসুখ যা মগজ, কিডনি ও যকৃত্ এর উপর প্রভাব ফেলে। এসপিরিন বাচ্চাদের অবশ্যই অবশ্যই দেওয়া উচিত নয়। নিষেধ। জ্বর হলে এসিটোএমিনোকেন বা ইবুপ্রুফেন মাত্রা অনুযায়ী দেওয়া যেতে পারে। বড়রাও সতর্ক হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

এলকোহল ও ব্যথার ওষুধ

এদুটো একত্রে সেবন বেজায় বিপজ্জনক। ব্যথার ওষুধ প্রভাব ফেলে রক্তচাপের উপর। কোন কোন ব্যথার ওষুধ কোন কোন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। যাদের আগে রক্তচাপ জানা নেই তারেদ রক্তচাপ জেনে নিতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ যারা খান তারা নিয়মিত রক্তচাপ মাপিয়ে দেখবেন এবং কোন ব্যথার ওষুধ প্রয়োজনে নেওয়া সঠিক হবে তা ডাক্তারের কাছে জেনে নেওয়া ভালো হবে।

পাকস্থলী সহ্য নাও করতে পারে

কোন কোন ব্যথার ওষুধ যেমন ইবুপ্রুফেন ও নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পাকস্থলীর আস্তরণে ক্ষত ও রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। অথবা কারো আলসার থাকলে তা প্রকট ও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। তাই তেমন ওষুধ খেতে হলে সবচেয়ে কম মাত্রার ও কম সময়ের জন্য নেওয়া যায় ও ভরাপেটে। প্রতিদিন প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত।

ব্যথা নাশক কিডনিকে ভারাক্রান্ত করতে পারে

কিডনি দুটো কঠোর শ্রম করে। বর্জ্য নিষ্কাশন করে এবং তরল ও ইলেকট্রোলোহার ভারসাম্য রক্ষা করে। এনএসএ আই.ডি এই কাজে বাঁধা দিতে পারে। এসব ওষুধ নিয়মিত খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে, বড় ক্ষতিও হতে পারে। ক্রনিক কিডনি রোগ থাকলে এনএসএআইডি খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কিডনি বান্ধব বিকল্প ওষুধও আছে।

হৃদযন্ত্রের অবস্থা কেমন

ওটিসি ব্যথা নামক হূদরোগীদের জন্য হতে পারে দু’দিকে ধার তলোয়ারের মত। প্রতিদিন কম মাত্রা এসপিরিন রক্তকে তরল রেখে হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোক কিছুটা প্রতিরোধ করতে পারে। আবার দীর্ঘদিন এসপিরিন নয় এমন NSAID ব্যবহারে, বিশেষ করে উচু মাত্রায় এসপিরিনের রক্ত তরল করার ক্ষমতা খর্ব হতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, তেমনি হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। যাদের কিডনি, হূদরোগ ও সিরোসিস আছে তাদের এসব ব্যথা নাশক বারন।

প্রথমে ওষুধের উপরে লেখা লেবেল পড়ে নিন, তাহলে ভুল কম হবে। ব্যথা নাশক ও যকৃত্এসিটোএমিনোফেন জাতীয় ওষুধ নির্দেশমত সেবন করলে নিরাপদ ও কার্যকর থাকা যায়। তবে সব ওষুধেরই ঝুঁকি আছে। এসিটোএমিনোফেন ব্যথা নাশক করে বেশ ভালো, তবে যকৃতের উপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত মাত্রা খেলে লিভারের বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই সঠিক মাত্রায় বেশি দিন নয়। প্রয়োজনে ডাক্তারা পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায়ও ব্যথার উপশম

গর্ভবতী হলে যাই গ্রহণ করা হয় তা চলে যায় অনাগত সন্তানের কাছে। গর্ভের তৃতীয় মাসে NSAIDS দেয়া ভালো নয়। ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথার ওষুধ দেয়া ভালো। পরস্পর প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ব্যথা নাশক ওষুধ সব ওষুধের সাথে চলেনা। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ।

আরএম-০৫/০১/০১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)