আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান সমস্যা লেগেই আছে। ছোটখাটো অসুখ বা রোগের জন্যে আমরা অনেক সময়েই ঘরোয়া টোটকা কাজে লাগিয়ে থাকি যার সুফল আমরা হাতেনাতে পাই। এরকমই একটা ঘরোয়া টোটকা হলো এপসম সল্ট। আমরা অনেকেই এর নাম শুনেছি। কিন্তু আমাদের শরীরের উপর এর প্রভাব বা সুফল অনেকটাই। ঠিক কি এই এপসম সল্ট?
এপসম সল্ট কিন্তু সাধারণ লবণ বা টেবিল সল্ট থেকে পুরোটাই আলাদা। আদপেই এটা সল্ট বা লবণ নয়। শুধুমাত্র দেখতে লবণের মত এবং লবণের মতই কেলাসাকার বলে একে সল্ট বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের অত্যাবশকীয় খনিজ যা এই এপসম সল্টে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। দু ধরনের এপসম সল্ট হয়। একটা কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্যে, আর একটা রান্নার জন্য।
এই এপসম সল্টের অনেক গুণ আছে যার জন্যে এর কদর অনেক বেশি। অনেক কাজে এবং আমাদের শরীরের অনেক উপকারে লাগে এই লবণ। তার মধ্যে সেরা দশটা ব্যবহার আপনাদের জন্যে আজ সাজিয়ে দেওয়া হলো।
১. স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে
এপসম সল্ট আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের জন্যে উপকারী। পরিমিত পরিমাণে এই সল্ট আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে। এর ম্যাগনেসিয়াম আয়নের উপস্থিতি স্নায়ুকে বাইরের এবং শরীরের ভিতরের সংকেত পাঠাতে এবং পেতে সাহায্য করে।
২. চাপ কমায়
এর ব্যবহার মানবদেহের শরীরের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। আমাদের দেহের অ্যাড্রেনালিন হরমোন ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ ভালো নয় তাই পরিমিত ব্যবহার জরুরী। এছাড়াও এপসম সল্ট জলে মিশিয়ে স্নান করলে আমাদের শরীরে সেরোটোনিনের উপস্থিতি বৃদ্ধি করে যা আমাদের চাপ কমাতে সাহায্য করে, আমাদের কে ভিতর থেকে শান্ত রাখে।
৩. সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে
আজকের দিনে কম বেশি প্রায় সবার ব্লাড সুগার আছে। সুগার এমন এক ক্ষতিকারক রোগ যা শরীরের বাকি কর্ম ক্ষমতা ক্রমশ নষ্ট করতে থাকে। এই এপসম সল্ট আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে কারণ এতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। পরিণামে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ভয় অনেকটাই কমে যায়।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
এটা সত্যি অবিশ্বাস্য যে এই এপসম সল্ট আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যা আমাদের শরীরের অনেক রোগের কারণ পরবর্তীকালে হয়ে দাঁড়ায়। এটা আমাদের শরীরে laxative বা জোলাপের কাজ করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা আছে। পরিমাণ মতো জলের সাথে মিশিয়ে খেলে এর ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি অন্ত্রে জলের পরিমাণ ধরে রাখে যা পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে সাহায্য করে।
৫. ম্যাগনেসিয়াম এবং সালফারের ভারসাম্য বজায় রাখে
পরিশ্রুত জল খাওয়ার জন্যে আমরা অনেক সময় ফিল্টারের জল ব্যবহার করি। এতে অন্য খারাপ জিনিসের সাথে অনেক সময় জলের প্রয়োজনীয় খনিজ বেরিয়ে যায়। যার মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম এবং সালফারের ঘাটতি অন্যতম। সালফারের ঘাটতি খুব কম দেখা গেলেও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এপসম সল্ট এই ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে।
৬. সাইনাসের যন্ত্রণা দূর করে
অনেকেই আছেন যারা মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পান। মাথার যন্ত্রণা, বিশেষত: সাইনাসের ব্যাথা কমানোর ক্ষেত্রেও এপসম সল্ট একই ভাবে কার্যকরী। রোজমেরি, ল্যাভেন্ডার তেলের মত এসেনশিয়াল তেলের সাথে এপসম সল্ট মিশিয়ে তার ঘ্রাণ নিতে থাকলে অল্প সময়েই সাইনাসের যন্ত্রণা থেকে আরাম পাবেন।
৭. মুখ ও শরীরের স্ক্রাব হিসাবে
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এপসম সল্ট সমান ভাবে সাহায্য করে। আধ চামচ এপসম সল্ট পরিমাণ মতো অলিভ অয়েলে মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল আপনার জন্যে বডি স্ক্রাব। মধু আর অলিভ অয়েলে এই সল্ট মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন ফেসিয়াল স্ক্রাব। এপসম সল্ট মুখের বা শরীরের মৃত কোষগুলোকে সহজেই পরিষ্কার করে।
৮. পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যাথা কমাতে
কোন অজানা পোকা অনেক সময়েই আমাদেরকে কামড়ায়। ডক্টরের কাছে যাওয়ার আগে সাময়িক উপশম পেতে উষ্ণ জলে এপসম সল্ট মিশিয়ে কামড়ের জায়গায় লাগান। আরাম পাবেন। মৌমাছি বা অন্য কোন কিছু কামড়ালে তার হুল বের করতে এই একি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
৯. পায়ের ব্যাথা
অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের পায়ের পাতা খুব ব্যাথা হয়। ক্লান্তি নেমে আসে সারা পায়ে। এপসম সল্ট দিয়ে এই ব্যাথা সহজেই দূর করা যায়। এক গামলা জলে এক চামচ সল্ট মিশিয়ে মিনিট কুড়ি পা ডুবিয়ে রাখুন। ম্যাজিকের মতন কাজ হবে, আরামও পাবেন।
১০. কৃষিকাজে, বাগান করতে
ম্যাগনেসিয়াম শুধু আমাদের মানবদেহে না, উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও কাজে লাগে। নিজের ছোট বাগান করবেন ভাবছেন, মাটি কি করলে উর্বর হবে তাই নিয়ে চিন্তিত। এই ক্ষেত্রে এপসম সল্ট মাটিতে মিশালে উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে।
আরএম-০৩/১২/০২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই)