জানেন কি ভরা পেটে ফল আর খালি পেটে পানি খেলে কী হয়?

জানেন কি ভরা পেটে

সেই ছোট বেলে থেকে ঠাম্মার মুখে মুখে শুনে আসছি খালি পেটে নাকি ফল খাওয়া উচিত নয়। তাহলে সবাই আজকাল ব্রেকফাস্টে ফল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কেন মশাই! এমন পরামর্শ দিচ্ছে কারণ বাস্তবিকই দিনের শুরুটা যদি ফল দিয়ে করা যায়, তাহলে দারুন উপকার মেলে। বিশেষত ঘুম থেকে উঠে যদি এক গ্লাস তরমুজের রসের সঙ্গে অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে শরীর একেবারে চনমনে হয়ে তো ওঠেই, সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তবে প্রশ্নটা এখানে অন্য জায়গায়।

ব্রেকফাস্টের মেনুতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে ফল থাকলে কি কোনও উপকার মেলে? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্রেকফাস্টে ফল খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে অন্দরে জমে যাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেনে আরও অনেক উপাকার। যেমন…

১. শরীরকে বিষ মুক্ত করে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সকাল ৭-১১ পর্যন্ত শরীর নিজের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালায়। এই সময় এক বাটি ফল খেলে শরীর থেকে বেশি মাত্রায় বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই টক্সিক উপাদানের প্রভাবে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তাই শরীরকে যদি সুস্থ রাখতে চান, তাহলে ফল খেতে ভুলবেন না যেন!

২. উপোসের পরে ফল মাস্ট! সারা রাত উপোস থাকার পর সকাল বেলা ফল দিয়ে দিনটা শুরু করলে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, তেমনি ফল হজম হতে একেবারেই সময় লাগে না, ফলে বদহজম বা ঐ জাতীয় কোনও সমস্য়া হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই যারা প্রায়শই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ভুগে থাকেন, তাদের নিয়ম করে সক্কাল সক্কাল ফল খাওয়া উচিত।

৩. শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: ফলের অন্দরে থাকা প্রকৃতিক শর্করা রক্তে মেশার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কও সজাগ হয়ে ওঠে। ফলে সার্বিকবাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চা-কাফি খেলে এমন উপকার পাওয়া যায় না। উল্টে নানান ক্ষতি হয় শরীরের।

৪. ওজন কমে: অতিরিক্ত ওজনেরে কারণে যারা বেজায় চিন্তায় রয়েছেন, তারা নিয়মিত ব্রেকফাস্টে যদি ফল খাওয়া শুরু করুন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মেলে। কারণ ফলের অন্দরে থাকা একাধিক পুষ্টিকর উপাদান একদিকে যেমন শরীরে মজুত টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তেমনি অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে কম খেলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারেই থাকে না বললেই চলে।

৫. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলে: বেশিরভাগ ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দেহের অন্দরের শক্তি এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে রোগ প্রতিরোধ ব্য়বস্থা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় নানা রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়, সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৬. খালি পেটে ফল খেলে অ্যাসিড হয় না: “সক্কাল সক্কাল ফল খাওয়া মানেই চোরা ঢেকুর আর অ্যাসিডিটির কবলে পরা”- এমন ধরণার কিন্তু কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে ফল খাওয়া মাত্র অ্যাসিড হওয়ার কোনও সম্ভাবনা তো থাকেই না। উল্টে শরীরে অ্যাসিড এবং অ্যালকেলাইনের ভারসাম্য ঠিক হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাসিডিটি এবং গ্য়াস-অম্বলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

৭. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়: দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন নাকি? তাহলে ব্রেকফাস্টের মেনুতে ফল থাকা চাইই-চাই। কারণ নিয়মিত খালি পেটে ফল খেলে শরীরে উপকারি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

৮. নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমায়: ফলের অন্দরে থাকা ফাইবার, শরীরে প্রবেশ করার পর হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে একদিকে যেমন হজমক্ষমতার উন্নতি ঘটে, তেমনি কনস্টিপেশন মতো রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তাই যারা নানাবিধ পেটের রোগের কারণে বেজায় চিন্তায় রয়েছেন, তারা নিয়ম করে ব্রেকফাস্টে ফল খাওয়া শুরু করুন। দেখবনে দারুন উপকার মিলবে।

আরএম-০১/২০/০২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)