স্ট্রোকের এই ৬টি উপসর্গ কখনোই অবহেলা করবেন না

স্ট্রোকের এই ৬টি

স্ট্রোক যে ভয়াবহ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, তা জানি আমরা সবাই। স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো ব্রেইন ড্যামেজ। স্ট্রোকের সঠিক চিকিৎসা করা হলে ব্রেইন ড্যামেজ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু স্ট্রোকের লক্ষণকে অন্য কোনো সাধারণ শারীরিক সমস্যা মনে করেন অনেকেই, আর এ কারণেই তাদের সময়মতো চিকিৎসা নিতে দেরি হয়।

স্ট্রোকের প্রতি মিনিটে আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ১৯ লাখ কোষ মারা যায়। প্রতি ঘণ্টায় আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় সাড়ে তিন বছর বুড়ো হয়ে যায়। স্ট্রোকের পর চিকিৎসা গ্রহণ করতে যত দেরি হবে, রোগীর কথা বলতে সমস্যা, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়া ও আচরণগত সমস্যা তত বেশি হবে। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও কিছু মানুষ বিশ্বাস করতে চান না এটা স্ট্রোক, ভাবেন এটা সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা নিজে থেকেই চলে যাবে।

স্ট্রোক দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো ইস্কেমিক স্ট্রোক, যাতে রক্তনালি আটকে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। আরেকটি হলো, হেমোরেজিক স্ট্রোক, অর্থাৎ কোনো একটি রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্তপাত হচ্ছে। দুটোরই উপসর্গ একই ধরনের। এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউকে জানান, অথবা অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন বা আশপাশের কোনো হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কোনোভাবেই দেরি করবেন না।

১) ক্লান্তিতে চোখে ঝাপসা দেখছেন?

চোখে ঝাপসা দেখা, একই জিনিস দুটো করে দেখা বা এক চোখে দেখতে না পাওয়াটা স্ট্রোকের লক্ষণ। কিন্তু অনেকেই একে বার্ধক্য ও ক্লান্তির লক্ষণ বলে মনে করেন। মস্তিষ্কে রক্তনালি আটকে গেলে চোখে অক্সিজেন আসা বন্ধ হয়ে এমন লক্ষণ দেখা দেয়। তাই একে অবহেলা করা যাবে না।

২) হাত অসার হয়ে গেছে ও ঝিমঝিম করছে?

হুট করেই হাত অসার হয়ে গেছে, হাতে কোনো অনুভূতি পাচ্ছেন না, এমনকি হাত নাড়াতে পারছেন না— এমন সমস্যা যদি কয়েক মিনিট ধরে বজায় থাকে তাহলে এটা স্ট্রোকের লক্ষণ এবং দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। মাথার পেছন দিয়ে মেরুদণ্ড বরাবর যেসব আর্টারি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে, তাতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

৩) কথা জড়িয়ে আসা

যারা নিয়মিত পেইনকিলার বা ঘুমের ওষুধ খান তারা মনে করেন কথা জড়িয়ে আসা বা কথা বলতে সমস্যা হওয়াটা ওষুধের প্রভাব, আসলে কিন্তু তা নয়। কথা জড়িয়ে আসা স্ট্রোকের লক্ষণ। এ ছাড়া মুখের এক দিক বেঁকে যাওয়া বা বিকৃত দেখানোটাও স্ট্রোকের লক্ষণ।

৪) মাথা ঘোরা ও হাঁটতে সমস্যা হওয়া

মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা পড়লে মানুষের হাঁটতে সমস্যা হয়, সহজে হোঁচট খান এবং হুট করেই মাথা ঘুরতে শুরু করে। আপনি যদি ভাবেন একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে, তা ভুল। বরং দ্রুতই হাসপাতালে যাওয়া উচিত এ সমস্যায়।

৫) চিন্তা-ভাবনা ধীর হয়ে আসা

কারো সঙ্গে কথা বলছেন বা কিছু লিখছেন, অথচ আপনি ভাবনার খেই হারিয়ে ফেলছেন। যা বলতে চাচ্ছেন, তা পেটে এলেও মুখে আসছে না। অনেকে ভাবেন ঘুম কম হওয়া বা ক্লান্তি এর পেছনে দায়ী। কিন্তু এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে স্ট্রোকের সময়ও। বেশ কয়েক মিনিট ধরে আপনি কী বলবেন বা কী লিখবেন মনে করতে পারছেন না, তা স্ট্রোকের লক্ষণ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

৬) প্রচণ্ড মাথাব্যথা

অনেকেরই মাইগ্রেনের ব্যথা থাকতে পারে। কিন্তু আপনার মাইগ্রেন নেই, তারপরেও তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে স্ট্রোকের লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে সাবধান থাকাই ভালো এবং হাসপাতালে যাওয়া উচিত। ডাক্তাররাই ভালো বুঝতে পারবেন এটা স্ট্রোক নাকি নিছক মাথাব্যথা। সাবধান থাকাটাই আপনার জন্য উপকারী।

আরএম-০৫/১৪/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট)