গনোরিয়া-সিফিলিসের মতো যৌনরোগ সম্পর্কে জানেন তো?

স্মার্টফোন, হোয়্যাটসঅ্যাপের যুগে বেশ তাল মিলিয়ে চলেন। দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রতিনিয়ত হয়ে উঠেছেন আধুনিক। এদিকে নিজের রোগের বেলায় লুকোছুপি। না জানি কী থেকে কী হয় ভেবে ভয়ে বাড়ির লোক তো নয়ই এমনকী অনেকে ডাক্তারকেও সমস্যা খোলাখুলি বলতে ইতঃস্তত করেন। আবার একধরনের মানুষ আছেন শরীরের অন্য রোগের মতো যৌনরোগকে তোয়াক্কাই করেন না। কেউ নিতান্ত লজ্জাতেই এড়িয়ে যান। এদেশে বিভিন্ন ধরনের যৌনরোগের মধ্যে গনোরিয়া ও সিফিলিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অবহেলা না করে সময় থাকতেই সঠিক চিকিৎসা করান। চেপে না রেখে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যান।

গনোরিয়া-

গনোরিয়া এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত একটি যৌনরোগ। সাধারণত মূত্রনালিতে গনোরিয়া সংক্রামিত হয়। যৌনমিলন থেকে এই রোগ ছড়ায় এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আক্রান্ত হতে পারে।

উপসর্গ-

পুরুষদের ক্ষেত্রে

১. মূত্রনালি থেকে পুঁজের মতো তরল বের হয়।

২. প্রস্রাব করতে কষ্ট হয় এবং এমনকী জটিল অবস্থায় প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে

১. প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। পরে ধীরে ধীরে রোগ শরীরে বিস্তার করলে লক্ষণ দেখা যায়।

২. যোনিপথ আক্রান্ত হতে পারে।

৩. পুঁজ সদৃশ হলুদ স্রাব বের হয়।

৪. ঋতুস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সিফিলিস-

সিফিলিস ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের মাঝামাঝি ট্রেমনোমা প্যালিডাম নামক একটি জীবাণুর কারণে হয়। যৌনমিলনের সময়ে এই জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে।

উপসর্গ-

১. যৌনাঙ্গে ঘা বা ক্ষত হয়। সিফিলিসের তিনটি আলাদা পর্যায়ে ভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। এই রোগের প্রথম পর্যায় প্রাইমারি সিফিলিস, যৌনাঙ্গে এক বা একাধিক ব্যথাহীন মাঝারি আকৃতির ক্ষত সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে জীবাণু শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে শরীরে এই রোগটি ছড়িয়ে যায়। তৃতীয় পর্যায়ে সাধারণত হৃদপিণ্ড, রক্তনালী, মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।

২. সিফিলিসের চিকিৎসায় অবহেলা করলে রোগটি খুবই জটিল আকার ধারণ করে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এটি সুপ্ত অবস্থায় ঠিক হয়ে যায় এবং বছর দু’য়েক সুপ্ত থাকার পরে শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসাহীন থাকলে পুরুষদের যৌনাঙ্গে ক্ষত বা ঘা হয়। রোগ হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে নিউরোসিফিলিস হয়। যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৩. মায়ের সিফিলিস থাকলে জন্মের সময় শিশু সিফিলিস নিয়ে জন্মাতে পারে। একে কনজেনিটলি সিফিলিস বলে।

৪. গনোরিয়া ও সিফিলিস দু’টি রোগই যৌন মিলন থেকে ছড়ায়। সিফিলিস রোগের জীবাণু রক্তের মাধ্যমেও রোগীর শরীর থেকে অপরজনের শরীরে যেতে পারে।

চিকিৎসা-

১. গনোরিয়া ও সিফিলিসের যে কোনও লক্ষণ দেখা গেলেই অবিলম্বে সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

২. গনোরিয়ার সঙ্গে ক্ল্যামাইডিয়া থাকলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। অন্যথা পরবর্তীকালে বন্ধ্যাত্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. সিফিলিস রোগের ক্ষেত্রে যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে ক্ষত কয়েকদিনে সেরে গেলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন পর্যায়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

৪. দু’টি যৌনরোগেই এইচআইভি টেস্ট করতে হবে।

৫. সঠিক গাইডলাইন মেনে যৌনরোগের চিকিৎসা করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির যৌনসঙ্গীরও চিকিৎসা করতে হবে। কারণ যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে গনোরিয়া বা সিফিলিসে আক্রান্ত ব্যক্তির যৌনসঙ্গীর শরীরে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

রিস্ক ফ্যাক্টর-

১. একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে।

২. গনোরিয়া বা সিফিলিসে আক্রান্তের সঙ্গে সহবাস করলে

৩. কন্ডোম ছাড়া যৌনমিলন লিপ্ত হলে

সতর্ক হন-

১. নিজেদের যৌন জীবন নিয়ে সচেতন হন।

২. অবশ্যই মিলনের সময় কন্ডোম ব্যবহার করুন।

৩. যৌনসঙ্গীর মধ্যে একজন আক্রান্ত হলে অপরজনকে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে।

৪. সিফিলিস থেকে বিভিন্ন সময় এইচআইভির সম্ভাবনা বাড়ে, তাই সময় থাকতে সতর্ক হন।

৫. যৌনরোগের যে কোনও উপসর্গ লক্ষ্য করলে ডাক্তার দেখিয়ে দ্রুত চিকিৎসা করান।

আরএম-২৭/২৭/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: সংবাদপ্রতিদিন)