নিয়মিত খেজুর ও কিশমিশ খাওয়ায় পাবেন যেসব উপকার

নিয়মিত খেজুর

সম্প্রতি “নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াবেটিস” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একটি রিপোর্ট। তাতে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে নিয়মিত খেজুর অথবা কিশমিশ, নয়তো একসঙ্গে দটোই যদি খাওয়া যায়, তাহলে ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ পায় না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সারা বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে ভারতবর্ষ। আর সবথেকে ভয়ের বিষয় হল এই মারণ রোগে আক্রান্তের মধ্যে বেশিরভাগই কম বয়সি। তাই তো বলি বন্ধ, ২৫-৪৫ বছর বয়সিরা যদি সময় থাকতে থাকতে সাবধান না হন, তাহলে কিন্তু বিষণ বিপদ!

তবে নিয়মিত এক মুটো করে কিশমিশ বা অল্প কতক খেজুড় খাওয়া যদি শুরু করতে পারেন, তাহলে যে কেবল ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে দূরে থাকবে, তা নয়, সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকারও পাওয়া যাবে। যেমন ধরুন-

১. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে:

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খেজুর খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের রোজের ডায়েটে এই ফলটি থাকা মাস্ট!

২. অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমে:

কিশমিশে উপস্থিত পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে রক্তে অ্যাসিডিটির মাত্রা কমতে সময় লাগে না। ফলে শরীর যেমন চাঙ্গা হয়ে ওঠে, তেমনি বয়েল, স্কিন ডিজিজ, নানাবিধ অঙ্গের ক্ষতি হওয়া এবং গাউটের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। এক কথায় সার্বিকভাবে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে কিশমিশের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সাপ্লিমেন্ট খেয়েই যাচ্ছেন? লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে না তো? হঠাৎ ব্রণ? ঢেকে রাখবেন কীভাবে? ক্রনিক কার্ডিওতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি?

৩. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে খেজুর খাওয়ার পাশাপাশি যদি নিয়মিত এই ফলটির পাতা খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে চোকে পরার মতো! সেই সঙ্গে নাইট ব্লাইন্ডনেস সহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।

৪. অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমে:

কিশমিশে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনকে বাড়িতে দেয়। ফলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা কমতে একেবারেই সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে যে হারে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ বাড়ছে, তাতে প্রত্যেকেরই যে কিশমিশ খাওয়ার প্রয়োজন বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!

৫. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:

একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে খেজুরে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর ব্রেন সেলের ক্ষমতাকে এতটাই বাড়িয়ে তোলে যে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তাই তো বলি বন্ধু আশেপাশের মানুষদের থেকে যদি একটু বেশিই বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে চান, তাহলে প্রতিদিন ২-৩ টে করে খেজুড় খেতে ভুলবেন না যেন!

৬. হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

ডায়াটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে “এল ডি এল” বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত পটাশিয়াম আরও সব হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমায়।

৭. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর হয়:

খেজুরে প্রচুর মাত্রায় প্রাকৃতির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, এই ফলটিতে বেশ কিছু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজও রযেছে, ফলে নিয়মিত খেজুর খেলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে হ্রাস পায়।

৮. হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে:

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কিশমিশে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং বোরন নামক উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে “বোন ফরমেশন” যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই তো বলি বন্ধু, অল্প বয়সেই যদি অস্টিওপরোসিস বা অন্য কোনও হাড়ের রোগে আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে নিয়নিত এক মুঠে করে কিশমিশ খেতে ভুলবেন না যেন!

৯. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে:

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে প্রতিদিন তিনটে করে খেজুর খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে ক্যান্সার সেলের জন্মে নেওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। ফলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না, বিশেষত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার মতো রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

১০. ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে:

খেজুরে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং ডি শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ত্বক টানাটান হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বলিরেখাও গায়েব হতে শুরু করে। ফলে ত্বক প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, এই ফলটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-এজিং প্রপাটিজ, ত্বকের বয়স ধরে রাখতেও নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

১১. নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমে:

প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে নিয়মিত এই ফলটি খেলে বাওয়েল মুভমেন্টে মারাত্মক উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের পেটের রোগই আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৩ টে করে খেজুর খেলে শরীরে অন্দরে উপকারি ব্যাকটেরিয়ায় মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বদ-হজম, কোলাইটিস এবং হেমোরয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

আরএম-০১/০২/০৪ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই)