শরীরের সমস্যাগুলো ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে নয় তো?

শরীরের সমস্যাগুলো

ম্যাগনেসিয়াম হলো এমন এক মৌল, যার ওপর শরীরের প্রায় ৩০০টি বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়া নির্ভরশীল। তাই এই মৌলর ঘাটতি হলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা হবে, তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান সময়ে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি জনিত সমস্যা বিশেষজ্ঞদের চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু কোন কারণে এখন ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি এত বাড়ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিকাজে ব্যবহার হওয়া সার এবং কীটনাষকের মধ্যে থাকা রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে। ফলে চাষে উৎপন্ন শস্যে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমছে।

এমনকী সেই সব রাসায়নিক জলের মাধ্যমে ঘাস বা অন্য গাছপালায় পৌঁছে গেলে, সেই গাছপালা খেয়ে যেসব প্রাণী বেঁচে থাকে, তাদের শরীরের কমছে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ। তাদের মাংসেও তাই কমে যাচ্ছে এই মৌলটি। এছাড়া পানীয় জলে ব্যবহার হওয়া ফ্লুওরাইড বা ক্লোরিনও নষ্ট করছে ম্যাগনেসিয়ামকে।

ফলে আমাদের শরীরেও কমে যাচ্ছে এই মৌলর পরিমাণ। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন, আপনার শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে? জেনে নেওয়া যাক কিছু কারণ

পেশির টান

ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তাই পেশিতে রক্ত ঠিকভাবে পৌঁছয় না। তার ফলে পেশি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এবং তাতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। এবং তার থেকেই আচমকা লেগে যেতে পারে পেশিতে টান। পেশিতে ঘনঘন টান ধরলে বুঝতে হবে, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে।

রক্তচাপের সমস্যা

ম্যাগনেসিয়ামের অবাবের প্রধান লক্ষণই হল রক্তচাপের বৃদ্ধি। ধমনীর গতিপথ রুদ্ধ হওয়ায় শরীরে রক্তচাপের পার্থক্য হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে রক্তচাপের সমস্যার প্রতিকার না করলে ভবিষ্যতে হার্টঅ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

অবসাদের আশঙ্কা

ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে মনের ওপর প্রভাব পড়ে মারাত্মক। দীর্ঘদিন ধরে শরীরে এই মৌলের অভাব থাকলে, অবসাদে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন যে কেউ-ই। শুধু তাই নয়, এর অভাবে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যাও হয়ে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এর কারণে শুরু হয় কি না, তা নিয়ে দ্বিমত আছে বিশেষজ্ঞ মহলে। কিন্তু এটা সকলেই মেনে নেন, এর ফলে অ্যাংজাইটির সমস্যা বাড়ে। দেজা ভু, কী এবং কেন? মন খারাপ? নিজের প্রতি ভালোবাসা ফিরিয়ে আনবেন কীভাবে? কী করে গরমে নিজের ত্বককে বাঁচাবেন? জেনে নিন

হরমোনের সমস্যা

ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই হরমোনের সমস্যা অন্যান্য জটিলাতার দিকে শরীররকে ঠেলে দিতে পারে। মানসিক সমস্যা বা অবসাদের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু এছাড়া দূরবর্তী সমস্যাও হতে পারে। যেমন মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সমস্যাও হতে পারে এই মৌলের অভাবে।

ঘুমের সমস্যা

ম্যাগনেসিয়ামের অভাব প্রথমেই টের পাওয়া যাবে কীভাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা টের পাওয়ার সরলতম উপায় হল ঘুম ঠিক হচ্ছে কি না দেখা। যদি ঘুমের সমস্যা হয়, বুঝতে হবে শরীরে এই মৌলের অভাব হয়েছে। মন ভালো রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌল বলা হয় এই ম্যাগনেসিয়ামকে। তাই এর অভাবে অন্য সমস্যার মতোই চলে আসে ঘুমের সমস্যা।

জীবনীশক্তির অভাব

আগে বলা সব ক’টা কারণ যোগ করলে বোঝাই যায়, এই মৌলের অভাবে শরীরে শক্তির অভাব হতে বাধ্য। জীবনিশক্তির ক্ষেত্রে বড় তারতম্য হয়ে যায় এই ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে। কাজে উৎসাহ পাওয়া যায় না, পেশির কর্মক্ষমতা কমতে থাকে।

হাড়ের ক্ষয়

ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে হাড়ের ক্ষয় হয়। হাড়ের পুষ্টির জন্য এই মৌল খুবই দরকারি। কিন্তু হারের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অস্টিওপোরেসিসের মতো অসুখও হতে পারে এই মৌলের অভাবে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে টের তো পাওয়া যাবেই। কিন্তু কীভাবে এই অভাব পূরণ করবেন, সেটাও জেনে রাখা দরকার। ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টের রাস্তা তো খোলাই রয়েছে। কিন্তু দৈনন্দিন খাবার থেকেও এর অভাব পূরণ করার উপায় আছে। কলা, শাকসবজি, আমন্ড বাদামে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম। আর এর বাইরে ডার্ক চকোলেটেও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি।

আরএম-০৫/২০/০৪ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)