বর্তমানে মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়েই চলছে। খাবারে ভেজাল, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ও ধূমপানসহ নানা কারণে গ্যাস-গ্যাস্ট্রিক প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবেও দেশে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যার অধিকাংশই বিক্রি হয় কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন ডেকে আনছে মারাত্মক ক্ষতি।
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি কি?
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হল পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং অবশেষে ক্ষতের সৃষ্টি করা। সাধারণত অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে এটি বেশি হতে পারে। কারণ এসব খাবারকে হজম করতে অতিরিক্ত এসিডের দরকার হয়; ফলে অনেক হাইড্রোজেন ক্ষরিত হয়ে ক্লোরিনের সঙ্গে মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে।
এ এসিডের পরিমাণ বেশি হলে আমাদের পাকস্থলীর চামড়া ভেদ করে এবং আলসার (ঘা) তৈরি হয়, তখন আমরা ব্যথা অনুভব করি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, গ্যাস্ট্রিক হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- খিদে কম পায়, পেটে গ্যাস হয়, বুক জ্বালা করে, পেটের মাঝখানে চিনচিনে ব্যথা হতে পারে। বুক ও পেটে চাপ অনুভূত হয়, হজমে অসুবিধা হয় এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির বারবার বমিও হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ বলেন, বাইরের খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। শহরেও গড়ে উঠেছে বড় বড় রেস্তোরাঁ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে যে ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে তাতে খাবার গ্রহণে আমাদের অবশ্যই আরও সচেতন হতে হবে। এদিকে অতিমাত্রায় ফাস্টফুডে আসক্তির কারণে যে গ্যাস্টিক সমস্যা বাড়ছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আসুন জেনে নেই গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচার উপায়।
১. প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুপুর ও রাতের খাবার খাবেন।
২. একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প করে বারবার খান।
৩. ধূমপান ও মদ্যপানকে এড়িয়ে চলুন।
৪. ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পেট খারাপ বা বমির ওষুধ কিনে খাবেন না।
৬. অতিরিক্ত তেল ও মসলা দেয়া খাবার খাবেন না। বাইরের খাবার না খেয়ে বাড়ির তৈরি খাবার খান। তাজা খাবার খান, স্টোর করা বা ফ্রোজেন ফুড কম খাবেন।
৭. শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
৮. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অনেক সময় এসব সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপ নেবেন না।
৯. তৈলাক্ত খাবার বাদ দিতে চেষ্টা করুন। মাংস, ডিম, বিরিয়ানি, মোগলাই, চায়নিজ খাবার যা-ই খান না কেন, তা দুপুরের মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত করুন। রাতের খাবারটি যেন হালকা হয়। শাকসবজি, ছোট মাছ এসব দিয়ে রাতের মেন্যু সাজান।
১০. খাওয়ার পরপরই অনেক বেশি পানি পান করার প্রবণতা বাদ দিন। ভাত খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
১১. দিনে কিংবা রাতে খাওয়ার পরপরই অনেকে শুয়ে পড়তে পছন্দ করেন। এটা না করে কিছুক্ষণ আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করতে পারেন অথবা বসে থাকতে পারেন সোজা হয়ে। অন্তত ৩০ মিনিট পর ঘুমাতে যান।
আরএম-০৮/০৭/০৫ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)