মূলা শীতকালীন সবজি। শীতের কিছু আগে থেকে পুরো শীতকাল জুড়ে পাওয়া যায়। এটি সাদা, লাল, বেগুনি ও কালো রংয়ের হলেও আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ও লাল রংয়ের মূলাই চাষাবাদ হয়। এটিকে আমরা সবাই চিনি। তাই নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
মূলার পাতা, ফুল, স্ফীত মূল বা শিকড়, বীজ অর্থাৎ সবই ব্যবহার হয়! তবে আমরা পাতা ও মূলটাই বেশি খেয়ে থাকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Raphanus sativus.
চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধে মূলার উপকারিতা
অনেকগুলো রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে মূলা ব্যবহৃত হয়। আসুন, জানা যাক মূলার উপকারিতা:
জন্ডিস: মূলা খুবই উত্তম ডি-টক্সিফায়ার বা টক্সিন নাশকারক। তাই লিভার এবং পেটের জন্য ভাল। এটি রক্ত পরিষ্কার করে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। জন্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কারণ মূলা বিলরুবিনের মাত্রা কমায়। জন্ডিসের চিকিৎসায় কালো মূলা, মূলার পাতা বেশি ব্যবহৃত হয়।
পাইল্স থেকে রক্ষা: মূলায় প্রচুর আঁশ থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য পাইল্স এর অন্যতম কারণ। যেহেতু মূলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না তাই পাইল্স থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
মূত্রতন্ত্রের রোগ প্রদাহ নিরাময়: মূলা খেলে মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মূলার রস প্রস্রাবের সময় জ্বালা-পোড়া ও মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ দূর করে। মূলা কিডনী পরিষ্কারক ও প্রদাহ দূরকারক।
ওজন কমানো: মূলা ক্যালরি তেমন না বাড়িয়েই ক্ষুধা দূর করে। এতে শর্করা কম, প্রচুর আঁশ, পানি থাকে। যেগুলো ওজন কমাতে সহায়ক। এটি পরিপাকে সহায়ক ও মল পরিষ্কারক।
হৃদরোগ দূরকারক: মূলায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থো-সায়ানিন থাকে। এটি এক ধরনের ফ্লাভোনয়েড যা শুধু মূলায় রং দেয় না, পাশাপাশি রয়েছে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ক্যান্সাররোধী: মূলা ডি-টক্সিফায়ার এবং এতে ভিটামিন-সি, ফলিক এসিড এবং অ্যান্থো-সায়ানিন থাকে। যেগুলো একত্রিতভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন- কোলন, কিডনী, অন্ত্র, পাকস্থলী এবং মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ধবল রোগ: লিউকো-ডার্মা বা ধবল রোগের চিকিৎসায় মূলার বীজ ব্যবহৃত হয়। মূলার বীজ পাউডার করে ভিনেগার, আদার রস অথবা গরুর মূত্রে ভিজিয়ে সাদা বা ধবল দাগে লাগালে ধবল রোগ দূর হয়। মূলার রস খেলেও দ্রুত ধবল রোগ দূর হতে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য: মূলায় থাকা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করে। পিত্তরস বাড়ায়। যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, লিভার এবং পিত্তথলিকে সুস্থ রাখে।
অ্যাজমা রোগ: মূলা শ্বসনতন্ত্রের সংকোচনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি নাক, গলা, শ্বাসনালী এবং ফুসফুসকে সর্দি, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে। জীবাণুরোধী এবং ভিটামিন থাকায় শ্বসনতন্ত্রকে প্রদাহ থেকেও রক্ষা করে।
রক্তচাপ: মূলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। যা রক্তচাপ কমায়।
ডায়াবেটিস: মূলা ডায়াবেটিস এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ত্বক পরিচর্যা: ভিটামিন-সি, ফসফরাস, জিংক এবং ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স থাকায় ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
জ্বর: জ্বর হলে বিট লবণের সাথে মূলার রস পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
ডিহাইড্রেশন: মূলায় প্রচুর পানি থাকে। তাই শরীরকে আর্দ্র রাখতে সহায়ক।
উপরিউক্ত উপকারিতা ছাড়াও মূলা ক্ষুধা বৃদ্ধিকারক, মুখ ও শ্বাস পরিষ্কারক এবং উত্তম জোলাপ। ক্যালসিয়ামের অভার দূর করে। মাথা ধরা, এসিডিটি, বমিবমি ভাব, মোটা হওয়া, গলা ব্যথা, হুপিং কাশি, গ্যাসট্রিক, পিত্তথলির পাথর, অজীর্ণ ইত্যাদি থেকে বাঁচায়।
মূলা দামে সস্তা, বাড়ির আশপাশেই চাষ করা যায় এবং সহজলভ্য। সুতরাং এত উপকারী সবজি আপনার নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় রাখছেন তো?
আরএম-১৪/২৭/০৬ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)