চোখ থেকে শ্লেষ্মা বের হওয়ার ৬ কারণ

চোখ থেকে

চোখ থেকে অল্প পরিমাণে শ্লেষ্মা (যা কেতুর নামে প্রচলিত) বের হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এটির রঙ, ঘনত্ব ও পরিমাণে পরিবর্তন আসলে তা মারাত্মক কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই আপনার চোখ থেকে হঠাৎ করে শ্লেষ্মা বের হতে থাকলে একে অবহেলা না করে চোখের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। এ প্রতিবেদনে চোখ থেকে শ্লেষ্মা বের হওয়ার ছয়টি কারণ উল্লেখ করা হলো।

* চোখের পাতার প্রদাহ

আপনার চোখে অল্প পরিমাণ শ্লেষ্মা নিয়ে জেগে ওঠা সাধারণত দুশ্চিন্তার কিছু নয়, কিন্তু এটি অতিরিক্ত শুষ্ক হলে আপনার সম্ভবত ব্লেফ্যারাইটিস রয়েছে। ব্লেফ্যারাইটিস হলো চোখের পাতার প্রদাহ, যার ফলে চোখের পাতার প্রান্ত বা লোমে শুষ্ক শ্লেষ্মা জমে। অথবা চোখের পাতার শুষ্ক শ্লেষ্মা আরো কমন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যেমন- অ্যালার্জি। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত আইকান স্কুল অব মেডিসিনের অন্তর্গত কর্নিয়া সার্ভিস অ্যান্ড রিফ্রেক্টিভ সার্জারি সেন্টারের পরিচালক পেনি আসবেল বলেন, ‘অ্যালার্জি সিজনের সময় আপনার চোখ থেকে বেশি তরল নিঃসরণ হতে পারে, যা চোখের পাতায় লেগে থেকে কঠিন আবরণে রূপ নিতে পারে অথবা চোখের পাতায় প্রদাহ হলে শ্লেষ্মা জমে কঠিন আস্তরণ সৃষ্টি হতে পারে।’ এছাড়া শুষ্ক চোখও চোখের পাতায় শ্লেষ্মা জমিয়ে কঠিন আবরণ তৈরি করতে পারে।

* চোখ ওঠা রোগ

হলুদ, সবুজ অথবা সাদা শ্লেষ্মা কনজাঙ্কটিভাইটিসের মতো ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। এই ইনফেকশনটিকে পিংক আই বলে এবং এটি আমাদের দেশে চোখ ওঠা রোগ নামে বেশি পরিচিত। পিংক আইয়ের ধরন দুটি: ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল। উভয় ধরনই ছোঁয়াচে, কিন্তু ভাইরাল পিংক আই সবচেয়ে সহজে ছড়াতে পারে- এমনকি হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও। ডা. আসবেল বলেন, ‘ভাইরাল পিংক আইয়ের ক্ষেত্রে এক চোখ লাল হয় ও জ্বালাপোড়া অনুভূত হয় এবং এক বা দু’দিনের মধ্যে অপর চোখটিরও একই পরিণতি হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাকটেরিয়াল পিংক আই সাধারণত এক চোখে হয়ে থাকে।’ সংক্রমিত চোখের পাতার লোমের গ্রন্থিকোষ দ্বারা সৃষ্ট স্টাই-ও (চোখের পাতায় ফোলা বা পিণ্ড) হলুদ পুঁজ ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

* শুষ্ক চোখ

অ্যালার্জি অথবা ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার চোখ থেকে পানি পড়তে পারে, কিন্তু চোখ থেকে অত্যধিক পানি পড়া শুষ্ক চোখেরও লক্ষণ হতে পারে। এই পানিতে শ্লেষ্মার অস্তিত্ব রয়েছে। আপনার কাছে হয়তো অবিশ্বাস্য লাগছে যে শুষ্ক চোখ থেকে কিভাবে পানি ঝরে? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলো- যখন আপনার চোখ সঠিকভাবে পিচ্ছিল হতে পর্যাপ্ত পানি উৎপাদন করে না, তখন তারা উক্ত্যক্ত হয়- এটি প্রচুর পরিমাণে চোখের পানি নিঃসরণের জন্য ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে।

* অশ্রুনালিতে প্রতিবন্ধকতা

অবরুদ্ধ অশ্রুনালি চোখের পানিকে স্বাভাবিকভাবে বের হতে দেয় না- এ দশাকে ডেক্রাইয়োসিস্টাইটিস বলে। এ দশায় একজন মানুষের চোখ ঘন ও আঠালো শ্লেষ্মা উৎপাদন করে।

* কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারজনিত ইনফেকশন

ডা. আসবেল বলেন, ‘কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে মারাত্মক ইনফেকশনের ঝুঁকি উচ্চ।’ যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে শ্লেষ্মা বের হচ্ছে এবং সেইসঙ্গে মাঝেমাঝে ব্যথা বা দৃষ্টিতে পরিবর্তন হচ্ছে, তাহলে এটি মারাত্মক কোনো ইনফেকশনের ইঙ্গিতবাহক হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল ও ফাঙ্গাল কেরাটাইটিস হলো কর্নিয়ার দুটি ইনফেকশন যা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে ডেভেলপ হতে পারে। এসব ইনফেকশনে শ্লেষ্মা নিঃসরণ ছাড়াও ব্যথা বা আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

* কর্নিয়াতে ঘা

যদি আপনার চোখের শ্লেষ্মা দৃষ্টি বিঘ্নিত হওয়ার মতো ঘন হয়, তাহলো চিকিৎসকের কাছে যেতে বিলম্ব করবেন না। কর্নিয়াল আলসার বা কর্নিয়াতে ঘা হলো কর্নিয়াতে বিকশিত ফোড়ার মতো ইনফেকশন- এটি খুব ঘন শ্লেষ্মা উৎপাদনের মাধ্যমে দেখতে সমস্যা সৃষ্টি করে। ডা. আসবেল বলেন, ‘দৃষ্টিশক্তির যেকোনো পরিবর্তন দুশ্চিন্তা করার মতো বিষয়।’

আরএম-০১/১৭/০৮ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)