কানে ব্যথার কিছু সহজ উপশম

কানে ব্যথার

কান আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল অংশ। আমরা প্রায় কানের নানা রকম সমস্যায় ভুগে থাকি। তার মধ্যে কানে ব্যথা একটি অন্যতম সমস্যা।

বিভিন্ন কারণেই কানে ব্যথা হতে পারে। সমস্যা থাকলেও এর সমাধানও আছে। আর তাই ব্যথার কারণ জেনে নিয়ে তবেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

কানে ব্যথা, কান ভারি লাগা বা কানের সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কানের ইনফেকশন। শুধুমাত্র শীতকালে ঠান্ডা লেগেই কিন্তু কানে ইনফেকশন হয় না। সারা বছরেই কানে ইনফেকশন হতে পারে। তবে কেন এই ইনফেকশন হয় এবং কীভাবে তা রোধ করা সম্ভব, তা আগে থেকে জেনে রাখা ভালো।

কানের ইনফেকশন কেন হয়?

সাধারণত কানের বাইরের দিকে বা মিড্ল ইয়ারেই ইনফেকশন হয়ে থাকে।

ভারতের নাক কান গলার (ইএনটি) এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘ঠান্ডা লাগলে নাকের সর্দিটা কানের দিকে চলে গিয়ে ইনফেকশন বাধায়। বড় থেকে শিশু সবারই কানের ইনফেকশন হতে পারে। শরীর সুস্থ রাখতে অনেকেই সাঁতার কেটে থাকে। তারপরে কান পরিষ্কার করতে ইয়ার বাড ব্যবহার করে। ফলে খুব সহজেই কানে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে ও ইনফেকশন হতে পারে। এক্সটার্নাল ইয়ারে তখন ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এছাড়া অনেকেরই স্বভাব থাকে কটন বাড দিয়ে সারাক্ষণ কান পরিষ্কার করার। সেটাও বিপজ্জনক।’

‘মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের কানেই একটা ওয়্যাক্সের স্তর থাকে, যা কানের অন্দরমহলকে বাইরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু ঘনঘন কটন বাড দিয়ে কান খোঁচালে সেই স্তর নষ্ট হয়ে যায়। আর তার সঙ্গে যারা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তাদের ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ সুইমিং পুলের পানিতে একাধিক মানুষ সাঁতার কাটেন। সেই পানিতে ইনফেকশনের ভয় থেকেই যায়। এছাড়াও খুব ঠান্ডা লেগে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাকে ইনফেকশন হলে তা পৌঁছে যেতে পারে কানে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।’

কানে ব্যথা হলে কী করবেন?

শিশুদের কানে ইনফেকশন খুব স্বাভাবিক। বাচ্চারা যাতে কানে কিছু দিয়ে খোঁচাখুচি না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাচ্চাদের কানে ব্যথা হলে তাদের কানে বেশি হাত না দেওয়াই ভালো। টর্চ দিয়ে ভেতরে কী হয়েছে তা কান টেনে দেখার চেষ্টা করলে শিশুর আরও ব্যথা বাড়তে পারে। বরং অল্প অল্প করে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম তেল জাতীয় কোনও কিছু কানের ভেতরে দেবেন না। একই শিশুর বারবার ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন

– অনেক সময়ে গরম পানির ভাপ নিলেও কানের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

– প্রত্যেকটি ইয়ারড্রপ ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। কখনোই পুরানো ইয়ারড্রপ ব্যবহার করবেন না।

– কানে আঙুল দিয়ে খোঁচাবেন না। নখ বড় থাকলে তা থেকে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

– কানে ব্যথা হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হালকা সেঁক নেওয়া যেতে পারে। কানে পানি ঢুকে গেলে অনেকেই ফের কানে পানি ঢুকিয়ে সেই কান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। সেটা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়। বরং তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে যতটা পানি মুছে নেয়া যায়, মুছে নিন। বাকিটা ঠিক সময় মতো বেরিয়ে যাবে।

কান পরিষ্কার রাখতে কী করতে হবে?

কান পরিষ্কার রাখার জন্য বাইরে থেকে কিছু করার প্রয়োজন নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ‘কানকে নিজের মতো থাকতে দিন। কান নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম। কান পরিষ্কার করতে বারবার কটন বাড ব্যবহার করা, পানি দেয়ার স্বভাব থাকলেই বরং কানে ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়তে পারে। তার চেয়ে বরং রোজ গোসলের পরে তোয়ালে দিয়ে কানের যতটা অংশ পারবেন, মুছে নিন। জোর করে কানের ভেতরে খোঁচাখুচি করবেন না।’

সতর্ক থাকুন

– ছোট বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে দুধ খাওয়ানোর সময়ে খেয়াল রাখবেন, তার কানে যেন দুধ চলে না যায়। অনেক সময়েই বাচ্চাদের কানে দুধ ঢুকে ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে।

– সেফটিপিন বা কোনও কাঠি দিয়ে কখনোই কান খোঁচাবেন না।

– অনেকেই মোবাইলের ইয়ারফোন ব্যবহার করে থাকেন। কারও সাথে ইয়ারফোন শেয়ার না করাই ভালো। নিজের ইয়ারফোনও আলাদা বাক্সে ভরে ব্যাগে বা পকেটে বহন করুন। ইয়ারফোন ব্যাগের মধ্যে ফেলে রেখে দিলে তাতে ধুলোবালি ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। তখন সেটি কানে গোঁজার সময়ে তা সহজেই কানের ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে ইনফেকশন হতে বেশি সময় লাগে না।

– কান ভারি লাগলে বা কানে শুনতে অসুবিধা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কান ধরে বেশি টানাটানি না করে বরং তাকে তার মতোই থাকতে দিন। দেখবেন, সে নিজেও ভালো থাকবে, আপনিও সুস্থ থাকবেন।

আরএম-০২/১৮/০৮ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)