তেলাপিয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

তেলাপিয়া

তেলাপিয়ার জনপ্রিয়তা এত বেশি যে আপনি সম্ভবত ইতোমধ্যে এ মাছ খেয়েছেন। এ মাছটিকে ‘অ্যাকুয়াটিক চিকেন’ বা ‘জলজ মুরগির মাংস’ হিসেবেও রেফার করা হয়। কিন্তু এটি কি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

চাষকৃত তেলাপিয়া মাছ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর কিনা এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট নয়, কারণ পৃথিবীর সবখানে একই পদ্ধতিতে এ মাছ চাষ করা হয় না- কোথাও কোথাও অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তেলাপিয়ার চাষ হয়, যা খেলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
তেলাপিয়া সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো চাষকৃত মাছ। বাইবেল বিশারদদের বাইবেল সংক্রান্ত লেখাতে এ মাছের উল্লেখ রয়েছে, সি ফুড হেলথ ফ্যাক্টস ডট অর্গের প্রতিবেদন অনুসারে (এ ওয়েবসাইটটি হলো ভোক্তা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তথ্য জানাতে কর্নেল ইউনিভার্সিটি ও অন্যান্য ইউনিভার্সিটির সমন্বিত উদ্যোগ)। বর্তমানে পৃথিবীর ১৩০টিরও বেশি দেশ তেলাপিয়া চাষ করে, যেমন- বাংলাদেশ, পেরু, ইকুয়েডর, তাইওয়ান ও চীন। বিশ্ব উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি তেলাপিয়ার চাষ হয় চীনে।

তেলাপিয়ার উৎপাদকেরা বিভিন্ন পরিবেশে এ মাছ চাষ করেন, যেমন- ইনডোর রিসার্কুলেটিং ট্যাঙ্ক ও পুকুর। চাষ করার ক্ষেত্রে তেলাপিয়ার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী- কারণ এ মাছ দ্রুত বাড়ে, ক্রাউডেড কন্ডিশন সহ্য করতে পারে এবং মাংসের পরিবর্তে শেওলা ও সয়াবিনের মতো উদ্ভিদ খায়। অবশ্য এসব ক্রাউডেড কন্ডিশন স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সমস্যার কারণ হতে পারে, বলছে মনিটারি বে অ্যাকুরিয়াম সিফুড ওয়াচের প্রতিবেদন। একারণে অনেক ভোক্তা সামুদ্রিক মাছের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

ইনস্টিটিউট অব কুলিনারি এডুকেশনের নিউট্রিশন বিভাগের পরিচালক সেলিন বেইচম্যান বলেন, ‘তেলাপিয়া নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে যেসব তেলাপিয়া উৎপাদিত হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একারণে উৎপাদকেররা এমন পরিবেশেও তেলাপিয়া চাষ করছেন যা এ মাছের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। তেলাপিয়া মাছ কেনার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব ফার্ম তেলাপিয়া চাষের জন্য অ্যাডিটিভ ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে সেসব মাছ কেনা থেকে বিরত থাকুন। সেসব ফার্মের তেলাপিয়া খেতে মানা নেই যেখানে মাছকে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়।’

পেরু ও ইকুয়েডরে রেসওয়ে (পানির প্রবাহ বিদ্যমান আছে এমন অগভীর ট্যাংক) ও মিষ্টি পানির জলাশয়ে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর তেলাপিয়া চাষ করা হয়, মনিটারি বে অ্যাকুয়ারিয়াম সিফুড ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী। তাইওয়ান, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদিত তেলাপিয়াও ভালো।

মনিটারি বে অ্যাকুয়ারিয়াম সিফুড ওয়াচ চীনে উৎপাদিত তেলাপিয়া এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দিচ্ছে, কারণ সে দেশের উৎপাদকেরা অবৈধ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন- এর মানে হলো, এসব তেলাপিয়া খেলে আপনার শরীরেও এসব অ্যান্টিবায়োটিক চলে আসবে। পৃথিবীতে তেলাপিয়ার উৎপাদন সবচেয়ে বেশি চীনে হয় বলে এ দেশের তেলাপিয়া মাছ এড়িয়ে চলা একটু কঠিনই বটে।

আপনার মনে হয়তো ইতোমধ্যে প্রশ্ন ওঠেছে যে, তেলাপিয়ার পুষ্টিগুণ কেমন? আপনি জেনে খুশি হবেন যে, তেলাপিয়া মাছে চিকেন ব্রেস্ট বা মুরগির বুকের মাংসের মতো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় বলে এ মাছকে অ্যাকুয়াটিক চিকেন বা জলজ মুরগির মাংস (রূপকার্থে) বলা হয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসের পুষ্টিবিদ ও ২বি মাইন্ডসেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলানা মুহালস্টেইন বলেন, ‘তেলাপিয়া মাছ হলো চর্বিহীন প্রোটিনের অন্যতম সর্বাধিক কার্যকর উৎস।’ তিন আউন্স তেলাপিয়া মাছে ১১০ ক্যালরি ও ২০ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এ মাছটি আয়রন, বি ভিটামিন, সেলেনিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টিরও ভালো উৎস।

তেলাপিয়া মাছে স্যালমন ও ম্যাকারেলের (দুটি ফ্যাটি ফিশ) মতো বেশি পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড না থাকলেও প্রোটিনের অন্যান্য প্রচলিত উৎসের (যেমন- গরুর মাংস, মুরগির মাংস ও শূকরের মাংস) চেয়ে বেশি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, বলেন পুষ্টিবিদ মুহালস্টেইন। আপনি তেলাপিয়ার ফ্যান না হলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পেতে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উৎসের খোঁজ করুন। কিন্তু তেলাপিয়া আপনার পছন্দের খাবার হলে কোন দেশের তেলাপিয়া কিনছেন তা নিশ্চিত হয়ে নিন। সাধারণত ইকুয়েডর, পেরু ও কলম্বিয়ার তেলাপিয়া মাছ সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।

আরএম-১১/১০/০৯ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)