গর্ভধারণের আগে জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

গর্ভধারণের

‘গর্ভধারণ’ একজন নারীর সব থেকে খুশি ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়। কিন্তু শুধু গর্ভধারণ করলেই চলে না, এর জন্য পূর্ববর্তী কিছু করণীয়ও থাকে। তবে অনেকেই এই ব্যাপারে সঠিক তথ্যটি জানেন না।

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য-

নারীর জন্য করণীয়

প্রথমে নিজের সম্পর্কে জানুন। যদি আপনি অপুষ্টিতে ভুগেন ও প্রয়োজনের তুলনায় আপনার ওজন কম হয়, তবে একটি অপুষ্ট শিশু জন্ম দেবার আগে নিজের সঠিক পুষ্টি নিয়ে ভাবুন।

আপনার যদি সর্দি, কাশি, ঠান্ডা, জ্বর, হাড়ে ব্যথা, বাত, মাথা ব্যথা, পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে গ্যাস ইত্যাদি হরহামেশা লেগেই থাকে, তবে বুঝতে হবে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এইসব ছোটো খাটো রোগ সম্পূর্ণ প্রেগ্ন্যান্সিতে আপনাকে নিয়মিত ভোগাবে! তাই এসব কারণের সঠিক রোগ ডায়গনোসিস, চিকিৎসা করান ও নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

যদি আপনার শীত গ্রীষ্মে ঠান্ডা কাশি, প্রসাবে ইনফেকশন, সাদাস্রাব, যোনিপথে চুলকানি ইত্যাদি রোগ প্রায়শই হয়। আর আপনি এটি পাত্তা না দিয়ে এর সঠিক চিকিৎসা করেন না কিংবা করলেও এটি বারবার হয়।

তাহলে জানুন, প্রেগ্ন্যান্সিতে যেকোনো সাধারণ ইনফেকশনের তীব্রতা বহুগুনে বেড়ে যায়। যা আপনার শিশুকে তেমন না ভোগালেও, আপনাকে বার বার ভোগাবে! তাই, এসব ক্রনিক রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতন হোন।

যদি বংশগত ভাবে কোনো রোগ শরীরে ধারণ করেন যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এজমা, এলারজি, থ্যালাসেমিয়া, রক্তরোগ, হেপাটাইটিস-বি ইত্যাদি। এই রোগগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রেগ্ন্যান্সিতে নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই এইগুলোকে অবহেলা করা যাবে না।

কিছু রোগ মায়ের কাছ থেকে সন্তানের শরীরে ছড়ায়। তাই, এসব বিষয়ে আগেই জেনে নিন ও করণীয় বিষয়ে সচেতন থাকুন।

কম বেশি রক্তশূন্যতা সব মেয়েদেরই আছে। প্রেগ্ন্যান্সিতে এর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এই সময় রক্তের গ্রুপ জানা না থাকা, ব্লাড ডোনার রেডি না থাকা প্রেগন্যান্সি ও ডেলিভারি সময়ে আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে!

যদি কোনো মেয়ে হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিনেটেড, টিটেনাস ভ্যাক্সিনেটেড না হয়ে থাকেন তাহলে প্রেগ্ন্যান্সির আগেই হেপাটাইটিস বি পজিটিভ বা নেগেটিভ জেনে নেয়া ভালো। কারণ, এ রোগ মা থেকে শিশুতে ছড়ায়।

যদি আপনার ওজন বেশি হয়ে থাকে তাহলে, থাইরয়েড হরমোন প্রোফাইল, কোলেস্টেরল ইত্যাদি চেক করে চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ করে নেয়া ভালো। কারণ, প্রেগ্ন্যান্সিতে এসব রোগের ওষুধ সেবন নিরাপদ নয়।

এছাড়াও এমন অনেক রোগে ভুগতে পারেন, যা সম্বন্ধে আপনি বিন্দুমাত্র সচেতন নন। অথচ নিরাপদ ডেলিভারি করানোর জন্য সেসবের চিকিৎসা প্রয়োজন। যেমন- পাইলস, অতিরিক্ত দুর্গন্ধ যুক্ত সাদাস্রাব,অ্যালার্জি, এজমা, জরায়ু, ওভারি টিউমার ইত্যাদি।

এসব ক্ষেত্রে কন্সিভের আগেই চিকিৎসা না করালে প্রেগ্ন্যান্সিতে ঝামেলা বাড়ে ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত, অনিরাপদ ও অসময়ে ডেলিভারির আশংকা বাড়ে!

পুরুষের জন্য করণীয়

আপনাকে সর্বপ্রথম এই ধারণা বদলাতে হবে যে, সন্তান ধারণ নারীর কাজ। এক্ষেত্রে পুরুষের শারীরিক সক্ষমতা জরুরি নয়!

সন্তানের জন্য পুরুষের কাছ থেকে যে শুক্রাণু আসে, তা যথেস্ট শক্তিশালী, পরিমাণে সঠিক ও পরিপুষ্ট হতে হবে। সেজন্য পুরুষের শরীরের স্বাভাবিক ফিটনেস, পুষ্টি সমানভাবে জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, স্থুলতা, ডায়বেটিস, অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, এলকোহল আসক্তি পুরুষের শরীরে শুক্রাণু উৎপাদন কম করে। তাই এসব রোগের ব্যাপারে সচেতন থাকা, চিকিৎসা করে নিয়ন্ত্রণ রাখা, বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকা জরুরি।

উভয়ের জন্য করণীয়

পুরুষ নারী দুজনের জন্যেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, লাইফস্টাইল পরিবর্তন, ঘুম, বিশ্রাম, সহবাসের নিয়ম ও সঠিক সময় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে জ্ঞান রাখা ও পালন করা জরুরি।

আমাদের সবার শরীরেই পুষ্টিগত ঘাটতি থাকে, যা খাবারে পূরণ হতে অনেক বেশি সময় লাগে। তাই এ সময়ে কিছু প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ফলিক এসিড, আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেয়া সমানভাবে জরুরি।

যেহেতু আমাদের সব বিষয়ে জ্ঞান নেই, সেজন্যেই পরিবার শুরুর প্রথমে আমাদের বিভিন্ন ভুল ধারণা ঠিক করে সঠিক পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

তবেই বিভিন্ন রোগ ডায়গনোসিস ও চিকিৎসা করা নিয়ে সময় নষ্ট কম হবে। তাই সঠিক পরামর্শ নেয়ার জন্য একজন প্রসুতী বিভাগের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

আরএম-১৮/১১/০৯ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)