সিগারেটের ধোঁয়ায় বাচ্চাদের যত ক্ষতি

সাত হাজার ক্ষতিকর রাসায়ানিক পাওয়া গেছে সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায়। তার মধ্যে একশটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। ৭০টি ক্যান্সার ডেকে আনার মতো রাসায়নিক আছে। সন্তানসম্ভাবা মায়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা থাকলে গর্ভস্থ ভ্রূণ ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অনেক সময় গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান বেরিয়ে আসে। হবু মায়ের সামনে যদি বাড়ির অন্য সদস্য সিগারেট টানে, তা হলেও বাচ্চার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি, অন্য ঘরে সিগারেটের ধোঁয়া টানলেও সন্তানসম্ভবার শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে।

বাচ্চারা খুব দ্রুত শ্বাস নেয়। সে কারণে সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়া চট করে তারা টেনে নেয়। শিশুদের শ্বাসনালী আকারেও অনেকটা ছোট। সে কারণে নিজেদের অজান্তে বুক ভরে টেনে নেয় ছেড়ে দেওয়া বিষাক্ত ধোঁয়া। সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়ের ফলে বাচ্চার অত্যন্ত সংবেদনশীল শ্বাসনালী আর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় সর্দিকাশি।

এ রকম চলতে থাকলে বারে বারে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের প্রদাহ হয়ে ক্রনিক সর্দিকাশি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যে সব শিশুর অ্যাজমা আছে, তামাকের ধোঁয়ায় তাদের বারে বারে অ্যাটাক হয়। অনেক সময় ইনহেলার বা ওষুধে কোনো কাজ হয় না।

নিউমোনিয়ায় কাহিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। বাচ্চার ভোগান্তির শেষ থাকে না। হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করে রিলিফ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বরাবরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্র।

মা-বাবা অথবা বাড়ির অন্য সদস্যদের ধূমপানের ফলে এক বছরের কমবয়সী বাচ্চাদের আচমকা মৃত্যুর শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শুরুতে মা ধূমপান করলে অথবা পরোক্ষভাবে সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকলে এক বছরের কমবয়সী শিশুদের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, হবু মা ধূমপায়ী হলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা অধূমপায়ীদের থেকে ৫৮ শতাংশ বেশি। সুতরাং সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে।

নিকোটিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কিছুটা ওয়াকিবহাল শিশুর নিকটাত্মীয়রা অনেক সময় বাড়ির বারান্দায় গিয়ে সিগারেট টেনে এসে বাচ্চাকে কোলে নেন। এর ফলেও শিশুর শরীরে সিগারেটের বিষ প্রবেশ করে।

ধূমপানের পর জামাকাপড়ে ও ধূমপায়ীর শরীরে বিষাক্ত রাসায়ানিক থেকে যায় কমপক্ষে ঘণ্টা চারেক। সে কারণে বারান্দায় সিগারেট টানলেও বাচ্চার ক্ষতির পরিমাণ বহাল থাকে পুরোদমে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে সিগারেট নামক মহাশত্রুকে জীবন থেকে বিদায় জানিানোর বিকল্প নেই।

আরএম-২২/০৩/১০ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)