শরীরকে চাঙ্গা রাখতে আখের রসের উপকারিতা

শরীরকে চাঙ্গা

চাকরি করেন না ব্যবসা? যাই করুন না কেন দিনের শেষ যখন অফিস থেকে ফেরেন তখন কেমন লাগে? বেশিরভাগ দিনই নিশ্চয় মাথা যন্ত্রণা, মন-মেজাজ খারাপ, সেই সঙ্গে হরেক রকমের চিন্তা এবং স্ট্রেস তো থাকেই। আর ঠিক এই কারণেই ভয়টা! আসলে দিনের পর দিন স্ট্রেস সইতে সইতে ঘাড়ে চেপে বসে একাধিক মরণঘাতি রোগ। ফলে আয়ু কমে চোখে পরার মতো। আর ঠিক এমন ঘটনাই যে ঘটছে তার প্রমাণ নানাবিধ সমীক্ষা রিপোর্ট।

বিবিধ ডেটা অনুসারে গত কয়েক বছরে আমাদের যে যে রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়েছে, তার সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেসের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো বলি বন্ধু, এমন চাপের পরিবেশে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে আখের রসের উপর ভরসা না রাখলে কিন্তু চলবে না! এই পানীয়টিতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিঙ্ক, থিয়ামিন এবং রাইবোফ্লেবিন। যা শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে স্ট্রেসের কারণে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো থাকেই না, সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন…

১. ভাবী মায়েদের জন্য উপকারি: আখের রসে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড মায়ের শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে বাচ্চার শারীরিক উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। এই কারণেই তো গর্ভাবস্থায় মহিলাদের নিয়মিত আখের রস খাওয়া পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

২. দেহের প্রতিটা অঙ্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আখের রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। বিশেষত সেনসরি অর্গেন, রিপ্রাডাকটিভ অর্গেন এবং ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আয়ুও বাড়ে চোখে পরার মতো। এবার বুঝেছেন তো বন্ধু, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে বাঁচতে আখের রস খাওয়ার প্রয়োজন কতটা।

৩.ডায়াবেটিসের মতো রোগ দূরে থাকে: গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে একেবারে তলার দিকে থাকার কারণে আখের রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। বরং এই প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই তো ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম করে আখের রস খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ডায়াবেটিকদের একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আখের রস খাওয়া উচিত। কারণ জেনে নেওয়া উচিত এই রসটি খেলে তাদের শরীরে অন্য় কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিনা!

৪. রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: আখের শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। প্রসঙ্গত, ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার বুঝেছেন তো আখের রস খাওয়াটা কতটা জরুরি।

৫. কনস্টিপেশনের মতো রোগ দূর পালায়: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে আখের রসে উপস্থিত ল্যাক্সেটিভ প্রপাটিজ বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে সময়ই লাগে না। সেই সঙ্গে আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আখের রসে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে কিডনি স্টোনের মতো সমস্যা দূর করতেও সাহায্য় করে। প্রসঙ্গত, কিডনি ফাংশনকে ঠিক রাখতেও আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

৭. এনার্জির ঘাটতি দূর হয়: সারা দিন অফিস করে কি বেজায় ক্লান্ত হয়ে পরেছেন? তাহলে ঝটপট এক গ্লাস আখের রস খেয়ে ফেলুন। দেখবেন একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। আসলে আখের অন্দরে থাকা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম এবং অন্য়ান্য় উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এনার্জির ঘাটতি দূর করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন এবং শরীর, দুইই চনমনে হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, আখের রস শরীরের অন্দের প্লাজমা এবং বডি ফ্লইডের ঘাটতি মেটায়। এই ভাবেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়য়ে তোলে।

৮. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: নানা কারণে কি গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই আখের রস খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন হজম ক্ষমতা একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আসলে এই প্রকৃতিক উৎপাদনে উপস্থিত পটাশিয়াম, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হজমে সহায়ক একাধিক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যে কারণে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।

৯. লিভারের ক্ষমতা বাড়ে: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সম্পর্কিত একাধিক বইয়ে এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যে লিভারকে সুস্থ রাখতে আখের রস দারুন কাজে আসে। সেই কারণেই তো জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে রোগীকে আখের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। শুধু তাই নয়, শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদা মেটাতেও আখ বিশেষ ভূমিকা নেয়।

১০. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়: সম্প্রতি হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আখের রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে ফ্লবোনয়েড নামক একটি বিশেষ উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই উপাদানটি ক্যান্সার সেলেদের ধ্বংস করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বন্ধু, বর্তমানে আমাদের দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে প্রায় সবারই যে প্রতিদিন আখের রস খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই!

১১. ত্বকের বয়েস কমে: শরীরের বয়স বাড়লে ত্বকের বয়স তো বাড়বেই! কিন্তু আপনি যদি চান, তাহলে কিন্তু এমনটা আপনার সঙ্গে নাও হতে পারে। কীভাবে এমনটা সম্ভব? একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত আখের রস খেলে দেহের অন্দরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্লেবোনয়েডের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এই দুটি উপাদান ত্বক এবং শরীরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে শরীরের পাশাপাশি ত্বকের বয়স বাড়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

১২. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: হাই কোলেস্টেরলের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই আখের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা বেশ কিছু উপাদান খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করে।

১৩. মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে নিয়মিত আখের রস খেলে হাড় শক্তপোক্ত তো হয়ই, সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।

১৪. ব্রণর চিকিৎসায় কাজে আসে: আখের রসে উপস্থিত আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড স্কিন সেলের উৎপাদন বাড়ায়ে ব্রণর প্রকাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রণর দাগ কমাতেও সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো আখের রস নিয়ে মুলতানি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্ট ভাল করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ভেজা তোয়ালের সাহায্যে ভাল করে মুখটা পরিষ্কার করে নিতে হবে।

আরএম-১০/১৭/১০ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)