ফল-সবজির খোসা ফেলে দেন! জানেন কী ভুল করছেন?

ফল-সবজির

ফল কিংবা সবজি কিনে খাওয়ার আগে ভাল করে ধুয়ে, খোসা ছাড়িয়ে নেওয়াই নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস মনে করেন অধিকাংশই। সবজির গায়ে লেগে থাকা কীটনাশক, ধুলো-ময়লা সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে ছাল ছাড়িয়ে খাওয়াই ভাল। কিন্তু অন্যদিকে এর কুফলও রয়েছে। খোসা ছাড়িয়ে খেলে ফল বা সবজিতে যে মূল পোষণগুলি থাকে অর্থাৎ ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, তার সিংহভাগই খোসার সাথে বাদ চলে যায়। কাজেই খোসা খান। ফল মিলবে।

খোসার গুণাবলী

১. ডায়েটারি ফাইবার

যে কোনও সবজি বা ফলের খোসা মানেই তাতে ডায়েটারি ফাইবারের পরিমাণ বেশি। এক স্বাস্থ্য জার্নালের তথ্য অনুযায়ী সবজি বা ফলে ৩১% ফাইবার খোসায় উপস্থিত। খাদ্যে ফাইবারের পরিমাণ বাড়লে তা পেট পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। খাদ্যের মাধ্যমে যে বিষাক্ত উপাদান বা টক্সিন শরীরে প্রবেশ করে, ফাইবার তা অন্ত্রের শ্লেষ্মিক ঝিল্লির সংস্পর্শে আসতে না দিয়ে শরীর থেকে বের করে দেয়। এছাড়া খোসাযুক্ত ফল-সবজি হজম হতে বেশি সময় লাগে, অনেকক্ষ পেট ভরতি থাকে। তাই খিদে কম হওয়ায় সারাদিনে শরীরে ক্যালোরি কম প্রবেশ করে, ফলে ওজন কমে দ্রুত।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

কিছু সবজি ও ফলের খোসাতেই তুলনামূলক ভাবে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ রোধ করতে সাহায্য করে। শারীরিক প্রক্রিয়ার কারণে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। ক্যানসার সেল তৈরি করে এই ফ্রি রেডিক্যালস। ফাইবারের মাধ্যমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করলে তা ফ্রি রেডিক্যালের মাত্রা কমিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের স্নায়ুজনিত রোগ (অ্যালঝাইমারস) প্রতিহত করে।

৩. ভিটামিন ও মিনারেলের জোগান

বেশ কয়েকটি সবজি ও ফলের খোসায় অনেক বেশি মাত্রায় ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। খোসা সমেত আপেলে খোসা ছাড়া আপেলের চেয়ে অধিকমাত্রায় ভিটামিন কে ও এ, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম উপস্থিত। ঠিক তেমনই একটি খোসা সমেত সেদ্ধ আলুতে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। খোসাযুক্ত লাউ-এ আয়রনের পরিমাণ ১১.৮৭ এমজি/১০০ গ্রামে। আর খোসা ছাড়ানোতে ২.৩৩ এমজি/১০০ গ্রামে।

খোসা খাওয়ার প্রণালী

১.কিছু ফল বা সবজির খোসা হজম করাবেশ দুরূহ। কাঁচা কিংবা রান্না করা যাই হোক না। সেগুলির ক্ষেত্রে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়াই বাঞ্চনীয়। যেমন- অ্যাভোকাডো, তরমুজ, আনারস, লিচু, রসুন, কলা, পিয়াঁজ ইত্যাদি।

২.কাঁচা না খেতে পারলেও কিছু সবজির বা ফলের খোসা রান্না করে বা প্রসেস করে খাওয়া যায়। যেমন-কুমড়ো, কাঁচাকলা, লাউ, আলু, কমলা লেবু, পাতিলেবু, মোসাম্বি, আম, আপেল, কড়াইশুঁটি, বেগুন, এপ্রিকট, গাজর, শশা, পটল, ঝিঙে ইত্যাদির খোসা।

৩. টক ফলের খোসাগুলি সেদ্ধ করে, আচার বা চাটনি বানিয়ে বা শুকিয়ে পাউডার করে খাওয়া যায়।

সতর্কতা

অনেক সময় সবজির গায়ে বা খোসার আস্তরণের মধ্যে বিভিন্ন পোকা-মাকড় ডিম পাড়ে। যা শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি। এছাড়া কৃষিতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার হয়। যা ফল-সবজির খোসার গায়ে লেগে থাকে। এছাড়া টাটকা দেখানোর জন্য বা আকর্ষণীয় করে বিক্রি করার জন্য সবজি ও ফলে রং মেশানো হয়। আপেলের উপর মোমের আস্তরণ আপেলকে বেশি আকর্ষনীয় করে তোলে ও তরতাজা দেখায়। এগুলি শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

মোমের আস্তরণ তুলতে বাজার থেকে ফল-সবজি কিনে তা ভিনিগার বা আপেল সিডার ভিনিগারে ও বেকিং সোডা দিয়ে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা দরকার। তারপর পরিস্কার জলে বা কলের জলে তা ধুয়ে নিলে নিরাপদ। তবে এই পদ্ধতিতে পুরোপুরি ভাবে রাসায়নিক দূর করা সম্ভব নয়। সবসময় যেকোনও ফল সবজি কিনে তা গরম জলে ভিজিয়ে রেখে তারপর ভাল করে ধুয়ে খেলে ভাল।

আরএম-২৫/১৭/১০ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)