ক্ষতির আশঙ্কা যদি ‘সাবধানে’ দাঁত না মাজেন

ক্ষতির আশঙ্কা

নিয়মিত দাঁত মাজা জরুরি, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু টুথপেস্ট বাছাই ও টুথব্রাশ চালনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল না রাখলে উলটে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে৷ তাই সঠিক মাত্রায় ঠিকমতো দাঁতের পরিচর্যা জরুরি৷

প্রতি বছর মাথাপিছু টুথপেস্টের ছয়টি টিউব, অর্থাৎ বছরে ৪০ কোটি টিউব ব্যবহার করা হয়৷ বিশেষ করে দাঁত সাদা করে, এমন টুথপেস্টের চাহিদা খুব বাড়ছে৷ এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করলে সত্যি দাঁতের রং কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ মনে হয়, দাঁত যেন কিছুটা পরিষ্কারও হয়েছে৷ কিন্তু দাঁত মাজার সময় বাড়াবাড়ি করাও ভালো নয়৷ বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ড. ফাল্ক শ্ভেনডিকে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে দাঁত নিয়ে চিন্তিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ অনেকেই দাঁতের গুরুত্ব ও মুখ পরিষ্কার রাখার বিষয়ে সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত সচেতন৷ এই রোগীরা অনেক সময় নিয়ে খুব ভালো করে দাঁত পরিষ্কার করেন৷ কিন্তু অনেকে বড্ড বেশি সময় ধরে দাঁত মাজেন৷’’

এমনটা করলে বরং দাঁতের ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ বিশেষ করে মাড়ির কাছে ‘ডেন্টাল নেক’-এর ক্ষতি হতে পারে৷ ড. ফাল্ক শ্ভেনডিকে ও তাঁর সহকর্মীরা প্রায়ই দাঁত মাজার এমন ক্ষতিকর চিহ্ন শনাক্ত করেন৷ ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এমন ক্ষতির মাত্রা প্রায় ৪৫ শতাংশ ছুঁয়েছে৷ ৬৫ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে সেই মাত্রা প্রায় ৫৮ শতাংশ৷

বিশেষ করে যে সব টুথপেস্টের মধ্যে আরডিএ-র মাত্রা বেশি, সেগুলি দাঁতের ক্ষতি করতে পারে৷ আরডিএ টুথপেস্টের মধ্যে অ্যাব্রেসিভ বা ক্ষয়কারী পদার্থের পরিমাণ তুলে ধরে৷ সেই পরিমাণ যত বেশি, দাঁতের উপর ততই ঘষা লাগে৷ ড. শ্ভেনডিকে মনে করেন, ‘‘বিশেষ করে দাঁত সাদা করে তোলা টুথপেস্ট বেশি ক্ষয় করে৷ মোড়কের উপর ‘ব্লিচিং’ বা ‘হোয়াইটেনিং’ লেখা থাকলে তা শনাক্ত করা যায়৷ অন্যদিকে যে টুথপেস্ট অত্যধিক সংবেদনশীল দাঁতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে অ্যাব্রেসিভের মাত্রা কম৷ অর্থাৎ যে টুথপেস্ট সংবেদনশীল দাঁতের পরিচর্যার জন্য বিপণন করা হয়, অ্যাব্রেসিভ এড়ানোর জন্য সেগুলিই উপযুক্ত৷’’

উচ্চ মাত্রার আরডিএ-সহ দাঁত সাদা করার টুথপেস্ট একমাত্র সত্যিকারের প্রয়োজনেই ব্যবহার করা উচিত৷ এক থেকে দুই সপ্তাহের জন্য তার ব্যবহার সীমিত রাখা ভালো৷

টুথব্রাশের চাপের মাত্রাও দাঁতের পরিচর্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এর ফলে টুথপেস্টের ঘর্ষণের প্রভাব বাড়তে পারে৷ আসলে মাত্র ৭০ থেকে ১০০ গ্রামের বেশি পরিমাণ ব্যবহার করার অনুমতি নেই৷ ড. শ্ভেনডিকে বলেন, ‘‘এই সঞ্চালন সহজ নয়৷ সব সময় মানুষের কাছে ওজন মাপার যন্ত্র থাকে না৷ টেবিলের উপর পরীক্ষা করা যেতে পারে৷ টুথব্রাশ পুরোপুরি না বাঁকিয়ে হালকাভাবে সেটি চালনা করা উচিত৷’’

তাই ইলেকট্রিক টুথব্রাশের মধ্যে প্রায়ই চাপ মাপার এক সেন্সর থাকে৷ আলোর সঙ্কেতের মাধ্যমে সতর্ক করে দেওয়া হয়৷ দাঁত মাজার আগে কী খাওয়া হয়েছিল, দাঁত মাজার সময় ঘর্ষণের ক্ষেত্রে সেই প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ৷ ড. ফাল্ক শ্ভেনডিকে বলেন, ‘‘টক জাতীয় কিছু খাদ্য পা পানীয় নিয়ে থাকি, যেমন কিছু ফল বা ফলের রস – এমনকি এনার্জি ড্রিংক বা দই খেলে খেয়াল রাখতে হবে, যে দাঁতের এনামেল নরম হয়ে যায়৷ তখন দ্রুত ক্ষতি হতে পারে৷ তখন কমপক্ষে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করা উচিত৷ মাঝে এক-দুই গ্লাস পানিও খেয়ে ফেললে ভালো৷ তারপর দাঁত মাজা উচিত৷’’

পরিষ্কার ও উজ্জ্বল দাঁত অবশ্যই ভালো৷ তবে দাঁতের ক্ষতি করে সে কাজ করা উচিত নয়৷

আরএম-০৮/০৫/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে)