গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টি’র এই গুণাগুনগুলি জানেন তো?

গ্রিন টি

দিনে একবার, দু’বার, তিনবার। কারও কারও ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশিবার পায়… চা তেষ্টা। তখন না পেলে মেজাজ একেবারে বিগরে যায়। বিশেষ করে যাঁরা সারাদিন কাজের মধ্যে থাকেন তাঁদের ভাল চা না পান করলে কাজে মন বসানো বেশ কঠিন। এখন আবার যারা চায়ের নেশায় আসক্ত নয় তাদেরও মন কাড়ছে চা। সাধারণত চায়ের রকমফের বলতে গুঁড়ো চা আর পাতা চা-ই প্রধান।

সাধারণত, পাতা তোলার পর কীভাবে তা প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে তার উপরই চায়ের ধরন ও গুণাগুণ নির্ভর করে। যত কম প্রক্রিয়াকরণ হবে চায়ের গুণাগুন তত বেশি বজায় থাকবে। চা পাতা তোলার পর তা শুকানো হয়, তারপর তা রোলিং বা পেশা হয়। তারপর তা অক্সিডেশন ও ফার্মেন্টেশন (গ‌্যাঁজানো) করে পানযোগ্য‌ করে তোলা হয়। এই পদ্ধতির উপরই নির্ভর করে চায়ের চরিত্র বা ধরন।

চায়ের উপকারি উপাদান

চা পানের পরই সমস্ত ক্লান্তি চলে যায়, বেশ সতেজ লাগে। চায়ে থাকা উপাদান ক্যাটেচিনের কারণেই এমন সুখানুভূতি প্রকাশ পায়। চায়ে মূলত তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। আইসোফ্লাভন, পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে চায়ের গুণ বজায় রাখতে তা চিনি এবং দুধ ছাড়া পান করা জরুরি।

গ্রিন টি

এই চা সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। গ্যাঁজানো হয় না এবং বেশি তাপে শুকানোরও প্রয়োজন পরে না। তাই সবুজ পাতা অনেকটা সবুজ থাকে। ফলে, এই চায়ে সবচেয়ে বেশি গুন রয়েছে। দিনে ২ কাপ গ্রিন টি পান করাই যায়। এই চা শরীরের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে শরীরকে সতেজ ও ঝরঝরে করে তোলে।

অ্যা‌ন্টি কার্সিনোজেনিক- গ্রিন টি তে এপিক্যাটেচিন, এপিগ্যালোক্যাটেচিন-৩-গ্যালাট উপাদান শরীরে ক‌্যানসার প্রতিরোধ করে। ব্লাড সুগার- এই চা পান করলে ইনসুলিন রেজিটেন্স কমে আর ইনস‌ুলিন সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে দেয়, ফলে অল্প ইনস‌ুলিনেই বেশি কাজ হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্লাড কোলেস্টেরল- রক্তে এলডিএল কমিয়ে দেয় এবং এইচডিএল বা গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক থাকে। ওরাল হাইজিন- ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ নিউট্রিশন’ অনুযায়ী মুখের দুর্গন্ধ, দাঁত বা মাড়ির যে কোনও রকম সমস্যা থাকলে গ্রিন টি একটু উষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করে খেলে মহাঔষধের মতো কাজ করে। কারণ এতে উপস্থিত ক্যাটেচিন এবং পলিফেনল প্রাকৃতিক ফ্লোরাইডের মতো কাজ করে।

স্থূলতা- শরীরের অত্যধিক মেদ ঝরাতে ক্যাটেচিন সাহায্য করে।

চুল পড়া- ডিএইচটি নামক একটি হরমোন অনেক ক্ষেত্রে চুল পড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। চায়ে উপস্থিত ক্যাটেচিন এবং পলিফেনল এই হরমোনটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং চায়ে বিদ্যমান এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালাট নামক একটি যৌগিক পদার্থ চুল গজাতেও সাহায্য করে।

অ্যান্টি এজিং- পলিফেনল বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের ঔজ্জ্বল‌্যতা বাড়ায় ও স্নায়ুর ক্ষতি প্রতিহত করে। তাই মানসিকভাবে অনেক ভাল থাকা যায়। রক্তচাপ- শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিকারী হরমোনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।

ব্ল্যাক টি

অধিকাংশই যে চা পান করেন তা হল ব্ল‌্যাক টি। চলতি কথায় আমরা যাকে বলি ‘র-চা’। এক্ষেত্রে সবুজ চায়ের পাতা অতিরিক্ত শুকিয়ে তৈরি করা হয়। প্রয়োজনে উনুনে সেঁকে নিয়েও পাতা শুকানো হয়। যাকে বলা হয় রোস্টেড টি। এক্ষেত্রে পাতার রং গাঢ় খয়েরি বা কালচে হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় চায়ে উপকারী গুণগুলি অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এই চা দু’প্রকারের হয়- গুঁড়ো চা বা সিটিসি (ক্রাশ/কাট, টিয়ার এন্ড কার্ল) ও পাতা চা বা লিফ টি।

পাতা চায়ে ক্যাটেচিন উপাদান থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। সিটিসিতে এই ক্যাটেচিন ছাড়া বাকি সব উপাদানই খুবই কম মাত্রায় উপস্থিত। লিফ টিতে কিছু পরিমাণে আইসোফ্লাভন, পলিফেনল এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান বর্তমান থাকে। গ্রিন টি-এর মতোই ভাল এই চা।

আরএম-২৪/০৬/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)