গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এই সব ব্যথায় ভয় কতটা?

গর্ভাবস্থার

গর্ভাবস্থায় পেটের আনাচকানাচেও যদি সামান্য ব্যথা হয়, চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। ভয় থেকে শুয়ে–বসে থাকতে শুরু করেন অধিকাংশ জন। তবে চিকিৎসকদের মতে, অনেক সময়ই এর কোনও প্রয়োজন নেই৷ বরং বেশি শুয়ে–বসে থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে। হরমোনের ওঠা–পড়া ও শারীরিক পরিবর্তনের ফলেই এ সব ব্যথা-বেদনা দেখা দেয়৷ গর্ভাবস্থায় এমন ধরনের ব্যথা একটু ভোগালেও প্রসবের পর এই সব বেদনা অনেকটাই প্রশমিত হয়।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরার মতে, ‘‘গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এ সব ব্যথা বাড়ে। অথচ এই সময় আমরা হবু মা-কে হালকা শারীরিক শ্রম, হাঁটাচলা করতেই বলে থাকি। তাতে শিশুর স্বাস্থ্য ভাল হয়, মায়েরও প্রসবের সময় সমস্যা ও জটিলতা কম আসে। অথচ এই সময় অনেকেরই ব্যথা নিয়ে অযথা ভয় পেয়ে একবারে বেড রেস্টে চলে যান। প্রয়োজনীয় ব্যায়ামগুলোও করেন না। এতেই ক্ষতি হয় বেশি। তবে একটানা ব্যথা হলে বা খুব বাড়বাড়ি করমের ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’’

এর মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি ব্যথা সম্বন্ধে আমাদের কোনও ধারণা নেই। সাধারণত ব্যথাগুলি এমনিতে নিরীহ। কিন্তু কখনও কখনও বাড়াবাড়িও হতে পারে। কাজেই কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন আর কখন দরকার নেই তা বুঝে নেওয়া দরকার। কী করলে তাদের বশে রাখা যাবে, জানতে হবে তা-ও৷

রাউন্ড লিগামেন্ট পেন

পেটের আকার বড় হওয়ার পর লিগামেন্টে চাপ পড়ে কুঁচকির কাছে বা পায়েও হালকা বা তীব্র ব্যথা হতে পারে। কষ্ট কমাতে অনেকটা হাঁটাচলায় রাশ টানুন। নিজেকে সচল রাখতে অল্প অল্প করে বার বার হাঁটুন। শোওয়া–বসার সময় পা বালিশ বা টুলে রাখুন৷ না কমলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷

পেলভিক জয়েন্টে ব্যথা

প্রসবের প্রস্তুতি হিসেবে তলপেটের পিউবিক জয়েন্ট চওড়া হতে শুরু করে৷ তার হাত ধরে ভ্যাজাইনার ঠিক উপরের হাড়ে ব্যথা হয় অনেকের৷ অনেক ক্ষণ দাঁড়ালে–হাঁটলে ও ক্লান্ত অবস্থায় তা বাড়েও। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা মারাত্মক রূপ নেয়। ছড়িয়ে পড়ে নিতম্বে। সিঁড়ি ভাঙা, হাঁটা। এমনকি বিছানায় পাশ ফিরতেও কষ্ট হয়৷ এ রকম হলে অর্থোপেডিক সার্জেনের পরামর্শ মতো কিছু থেরাপি করান। সঙ্গে পেশী দৃঢ় করার ব্যায়াম করুন। শোওয়া–বসার নিয়ম মেনে চলুন। উবু হয়ে বসবেন না। সাঁতারের ব্রেস্ট স্ট্রোকও বারণ এমন ব্যথায়। সব নিয়ম মেনে চললে প্রসবের পর কষ্ট থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই।

এই সময় অনেক চিকিৎসকই ব্যথা-বেদনা দূরে রাখতে কিছু ব্যায়ামের পরামর্শ দেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অভ্যাস করতে পারেন সে সব। রইল ভিডিয়ো।

হট স্পট

জরায়ুর চাপে পেটের পেশী চওড়া হতে শুরু করে বলে কখনও কখনও পেটের বিভিন্ন অংশে খুব জ্বালা ও ব্যথা হতে পারে। টাইট বা ভারী জামা–কাপড় না পরলে ও এক–আধটু বরফ সেঁক দিলে কমে যায়৷ না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

রেক্টাস ডায়াস্ট্যাসিস

রেক্টাস অ্যাবডোমিনাস নামে পেটের দু’টি পেশীর ছত্রছায়ায় থাকে বাড়তে থাকা জরায়ু। ব্যথা ওঠার পর এরাই সঙ্কুচিত–প্রসারিত হয়ে বাচ্চাকে ঠেলে বার করে। পেটের আকার বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় ২০ ইঞ্চির মতো প্রসারিত হয় এরা। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে দু’–দিকে প্রসারিত হওয়ার সময় মাঝে শূন্যস্থান তৈরি হয়। এরই নাম রেক্টাস ডায়াস্ট্যাসিস৷ হাঁটু ভাঁজ করে চিত হয়ে শুয়ে মাথা উপর দিকে তুললে যদি দেখেন নাভির নীচের অংশ থেকে কিছু একটা ঠেলে বেরিয়ে আসছে, তা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

আরএম-২২/১২/১২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা)