ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিও প্রতিবিধান

ব্রেস্ট ক্যান্সার

ব্রেস্ট ক্যান্সার বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম, ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি। ক্যান্সার নামটা ভয়ঙ্কর সৃষ্টিকারী। ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমার কিছু না বললেও চলে, বর্তমান সমাজে, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর রোগে জীবন দান করেনি এমন লোক পাওয়া যাবে না।

যুদ্ধ, প্লাবন ও দুর্ভিক্ষ, সমাজ জীবনে সাময়িকভাবে আসে আবার চলে যায়, বহু জীবন ধ্বংস করে, কিন্তু এই বিধ্বংসী রোগ ক্যান্সার ক্রমাগত মানব সমাজকে ধ্বংসের দিগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চেয়ে ও আর ও বড় বড় মনীষী এর ধ্বংসলীলার বিবরণ দিয়েছেন।

গত দুই যুগ ধরে এ রোগে যত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন, কোনো যুদ্বেও এত লোক জীবনাহুতি দেয়নি, এই রোগে মানুষের দুঃখ কষ্ট ও জীবননাশের কোনো হিসাব নেই। রাখা সম্ভবও নয়।

অসহায় মানুষ অনবরত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে। স্বামী-হারা , স্ত্রী, স্ত্রীহারা-স্বামী, পিতৃ-মাতৃহারা শিশু, জীবনের অর্জিত সম্পদ ভেসে যাওয়া ক্যান্সার এই সব দুঃখ কষ্টের কারণ।

এর একমাএ কারণ— রোগ ও এই রোগের উৎপত্তি কারণ সস্বন্ধে অজ্ঞতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে ও অজ্ঞতা। ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বা মানুষকে রক্ষা করার একমাএ পথ হল রোগের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতি সাধন করলে ও এই রোগটি নিয়ে মনে হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা খুবই হিমশিম খাচ্ছে, আজ পর্যন্ত ও এর কোনো সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে রোগের কারণ খুঁজে পেলে তার সঠিক সমাধান বেরিয়ে আসে। কারণ খুঁজতে গিয়ে তথাকথিত আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সদৃশ বিধান মতে— রোগের কারণ বিবেচনা না করে শুধু প্রচলিত ধারার গবেষণা করে যাচ্ছে, সাধারণত দেহ কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।

টিউমার সাধারণত দুই প্রকার— ১. ম্যালিগনেন্ট বা ক্যান্সারাস ২. বিনাইন বা সাধারণ/ যা ক্যান্সার (পিণ্ড) বলা হয়। আমাদের দেহের কোষ বিভাজনের সময় কোনো পর্যায়ে যদি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখনই তৈরি হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে শক্ত বা নরম আকারে তা ফুলে উঠে। টিপলে অনেক সময় ব্যথা ও জালা করতেও পারে। আবার অনেক সময় ব্যথা ও জালা থাকে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বর্তমানে জর্দা-গুল ও তামাককে টিউমার বা ক্যন্সারের জন্য বেশি দায়ী করা হয়ে থাকে। এছাড়া— সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি, কাজ না করে বসে থাকা, অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত মাদক সেবন, ধূমপান ইত্যাদির কারণেও টিউমার বা ক্যান্সার হতে পারে।

আজ বেস্ট ক্যান্সার নিয়ে কলাম লিখেছেন, বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা.এম এ মাজেদ তিনি তার কলামে লিখেন…‘সাম্প্রতিকালে সারা পৃথিবীর ন্যায় বাংলাদেশেও স্তন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা ক্রমাবর্ধমান লক্ষণীয়।

ভারত উপমহাদেশে প্রতি বছর আশি থেকে এক লাক মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে পারলে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারকে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আয়ত্তের মধ্যে আনা যায়।

সাধারণত এ রোগ চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের বেশি দেখা যায়। নিঃসন্তান মহিলা বা যে মহিলারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না বা খাওয়াতে অক্ষম তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি।

এই কোথা এখন সর্বজন স্বীকৃত যে, ব্রেষ্ট ক্যান্সারের একটা জেনেটিক লক্ষণ। পরিবারের কোনো মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাদের মা, বোন অথবা মেয়ের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২২-৩৩ শতাংশ বেড়ে যায়।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ :

কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যান্সারাস ও কয়েকটি নন-ক্যান্সারাস। এই ব্রেস্ট লাম্পগুলো অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়।

এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলো টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। এমন কিছু দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনো রকম রস কশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ।

অনেক সময় এর সঙ্গে নিপল থেকে হালকা হালকা রস? নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনো ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না।

আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবেন। স্তনে টিউমার থাকলে তা আশপাশের ব্রেস্ট টিস্যুগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে স্তনে একটা ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়। এরই সঙ্গে স্তনে লাল ভাবও থাকে। স্তনে হাত দিলে বা চাপ দিলে ব্যথাও লাগে।

কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে কারণ এই ক্যানসার স্তন থেকে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এই অংশগুলোতে। এই সমস্ত জায়গায় ব্যথা হলে সাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তা মাস?ল পেইন নাকি ক্যান্সারের কারণে ঘটছে। তাই পরীক্ষা করে নেয়াই ভালো।

স্তনের আকার এবং সাইজ পরিবর্তনও এই ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। সচরাচর এই বিষয়টি পার্টনারের চোখেই বেশি পড়ে। তেমন কিছু শুনলে বিষয়টি উড়িয়ে দেবেন না। নিজেই আয়নার সামনে স্তনটি পরীক্ষা করুন এবং ক্যান্সারের পরীক্ষা করিয়ে নিন। স্তনে লাম্প সব সময় বড় আকারের হয় না।

ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো লাম্পও দেখা যায় স্তনবৃন্তের আশপাশে। অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি ঘর্ষণ অনুভব করেন, বিছানায় শোওয়ার সময় যদি ব্যথা লাগে তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।

ব্রেস্টফিডিং করছেন না অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছে এমনটা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

এটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম বড় লক্ষণ। অনেক সময় স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যায়। স্তনবৃন্ত হলো স্তনের অসম্ভব সংবেদনশীল অংশ।

যদি দেখেন যে স্তনবৃন্ত স্পর্শ করলেও তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে না বা একেবারেই অনুভূতিহীন হয়ে গেছে তবে তা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

স্তনবৃন্তের ত্বকের তলায় ছোট ছোট টিউমার তৈরি হলেই এমনটা হয়। স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলাকালীনও এই বিষয়গুলো চোখে পড়ে।

সঙ্গীকে বলুন ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে। সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। স্তনের উপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতো, ক্যান্সারের প্রাথমিক স্টেজের লক্ষণ।

দিনের মধ্যে একটা সময় তাই ভালোভাবে স্তনটি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যে কোনো লক্ষণ চোখে পড়লেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করান।

ব্রেস্ট টিউমার পরিক্ষা করার প্রাথমিক নিয়ম

১. আয়নার সামনে দুপাশে হাত রেখে দাঁড়ান। দু দিকের স্তনের মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্য আছে কি-না লক্ষ করুন। এবার দু’হাত ওপরে তুলুন-মাথার পাশে রাখুন। দেখুন দু’দিকে কোনো অসামঞ্জস্য আছে কি-না?

২.হাতের চেটো দিয়ে প্রথমে এক দিকের স্তন ও পরে অন্য দিকের স্তন পরীক্ষা করুন। কোনো প্রকার চাকা বা ফোলা আছে কি-না লক্ষ্য করুন।

৩.এবার দেখুন নিপল এর কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি-না। যদি দেখা যায় একটি নিপল ভেতরে দিকে ঢুকে যাচ্ছে অথবা যদি নিপলের পাশে কোনো ঘা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাহলে সত্বর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন’।

নিপল থেকে কোনো প্রকার ‘ডিসচার্জ’ লক্ষ্য করলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেহেতু সহজেই স্তনে চাকা অনুভব করা যায়, তাই শরীরের অন্যান্য অংশের ক্যান্সারের তুলনয় ব্রেস্ট্র ক্যান্সারের চিকিৎসার হোমিওতে ভালো রেজাল্ট আশা করা যায়।

হোমিও সমাধান : রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা. হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ যেকোনো জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিত্তিক লক্ষণ সমষ্টিনির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছুই নেই। কেননা একসময় আমরা শুনতাম যক্ষা হলে রক্ষা নেই , বর্তমানে শুনতে পাই যক্ষা ভালো হয়। এসবকিছু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল । ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি।

সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। এটিই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত চিহ্ন এবং উপসর্গগুলো দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।

বিবিসি নিউজের ২০১৬ তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করে, আবার ইদানিং অনেক নামদারি হোমিও চিকিৎসক বের হইছে, তারা ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীকে অপচিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে তাদের কে ডা.হানেমান শঙ্কর জাতের হোমিওপ্যাথ বলে থাকেন, রোগীদের কে মনে রাখতে হবে, ব্রেস্ট ক্যান্সার কোনো সাধারণ রোগ নয়, তাই সঠিক চিকিৎসা পাইতে হইলে অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিন।

আরএম-৩১/১৫/১২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)