পুরুষের যে ১২টি লক্ষণ কোন জটিল রোগ নির্দেশ করে

পুরুষের

ছেলেরা রোগের উপসর্গ হেলায় উড়িয়ে দেন। কোনো কিছুকে গুরুত্ব যেনো দিতে চান না তারা। ফলে যে কোনো শারীরিক সমস্যাতেই একবারে শেষ মুহূর্তে ডাক্তারের কাছে যাওয়াটাই পুরুষের অভ্যাস। পুরুষরা নারীদের তুলনায় ডাক্তারের কাছে যান কম।

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরুষরা সুস্থ আছেন। তবে কিছু উপসর্গ আছে যা অবহেলা করা উচিত নয়। তাই নিচের কোনো একটি লক্ষণ যদি প্রকাশ পায় দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। দেখে নিন পুরুষের জটিল রোগের ১২ টি লক্ষণ।

১. ক্লান্তি অনুভব করা

ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা ‘সিএফএস’ আরেকটি সাধারণ অসুস্থতা যা থেকে ক্লান্তি লাগতে পারে, দুর্বলতা ভর করতে পারে। এমন সমস্যায় আক্রান্তরা সারা রাত ঘুমালেও পরদিনও তাদের ক্লান্তি দূর হয় না। ঠিক কোন সমস্যা থেকে সিএফএস তৈরি হয় তা বলা মুশকিল। তবে, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ভাইরাসের সংক্রমণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এমনকি প্রচণ্ড মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকেও এটা হতে পারে। ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠানামার কারণেও এমন শারীরিক ক্লান্তি তৈরি হতে পারে। ডায়াবেটিসের অনেক উপসর্গের মধ্যে প্রায়ই শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়া অবস্থাও একটি। আর বার বার প্রস্রাব পাওয়া আর তৃষ্ণার্ত হয়ে যাওয়া তো ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ। এমন হয়ে থাকলে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা থেকেই আপনি ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারবেন।

২. নির্দিষ্ট স্থানে টাক

বয়স বাড়ার সঙ্গে কমবেশি সব পুরুষই চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত হন। তবে অনেকসময় এটা মারাত্মক রোগের লক্ষণও হতে পারে। ‘জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অনকোলজি’র এক গবেষণা অনুযায়ী, মাথার সামনের অংশে এবং তালুতে চুল যাদের কমে যাচ্ছে তাদের প্রোস্টেটে টিউমার হওয়ার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। টাক পড়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার দুটারই কারণ হতে পারে শরীরে উচ্চমাত্রায় যৌন হরমোন। তাই চুল পড়ে যেতে থাকলে শরীরের কোথাও টিউমার আছে কিনা পরীক্ষা করাতে হবে।

৩. বয়সের আগে চুল পরে যাওয়া

পুরুষেরা চুল পরে যাওয়া ঘটনাটি সেরকম গুরুত্ব দেন না। কিন্তু অকালে চুল পরে যাওয়া আপনার রোগের লক্ষন। অকালে যদি আপনার চুল পরে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার থাইরয়েডের সমস্যা আছে। এই হরমোনের কমবেশি হওয়ার কারণে চুল উঠে যেতে পারে। এছাড়াও অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন পুরুষের টাকের সবচেয়ে বড় কারণ। এই হরমোন সাধারণত পুরুষের শরীরে বেশি পরিমাণে থাকে। যাদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাদেরই বেশি করে চুল পড়ে। নারীর মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। তখন হঠাৎ চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে।

৪. রাতে প্রস্রাব বেশি

একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি দিনে চার থেকে আটবার মূত্রত্যাগ করে থাকেন। পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, দিনে আটবারের বেশি প্রস্রাব করলে তাকে ঘন ঘন প্রস্রাব হিসেবে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন বয়সে প্রস্রাবের স্বাভাবিক পরিমাণ বিভিন্ন। তবে ঘন ঘন প্রস্রাব, হুট করে প্রচণ্ড প্রস্রাবের বেগ আসা, এমনকি শৌচাগারে যাওয়ার আগেই কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রোস্টেইট’য়ের মারাত্বক সমস্যার লক্ষণ, যেমন- প্রোস্টেইট ক্যান্সার, প্রোস্টেইট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডায়াবেটিস ছাড়াও মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণ, স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়ুরোগ, মূত্রথলির স্নায়ুবিকলতা, মূত্রথলির ক্যানসার, মস্তিষ্কের টিউমার, বিকিরণ, সার্জারি, আঘাত, কিডনি রোগ ইত্যাদি কারণে মূত্র নিয়ন্ত্রক এডিএউচ হরমোনের অভাব বা অকার্যকারিতা দেখা দেওয়া, থাইরয়েড হরমোন বা করটিসল হরমোনের আধিক্য, রক্তে ক্যালসিয়াম বা পটাশিয়ামের তারতম্য ইত্যাদি কারণে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

৫. প্রস্রাবে রক্তপাত হওয়া

প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া ভালো লক্ষণ নয়। তবে সব রোগী বুঝতে পারেন না যে রক্ত যাচ্ছে। অনেক সময় প্রস্রাব পরীক্ষায় রক্তের উপস্থিতি ধরা পড়ে। প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া সাধারণ ব্যাপার নয়, এটা রোগী ও ডাক্তার উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ। তাই রক্ত গেলে তা হালকাভাবে না দেখে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে। রক্ত গেলে প্রস্রাব লালচে বা বাদামি হতে পারে। কখনো কখনো প্রস্রাবে লাল রক্তের ফোঁটার মতোও দেখা যেতে পারে। কখনো কখনো রক্ত এত কম পরিমাণে যায় যে, খালি চোখে দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে শুধু ল্যাবরেটরি টেস্টেই রক্তের উপস্থিতি বোঝা যায়। একে বলা হয় আণুবীক্ষণিক রক্তপাত। প্রশ্ন হলো, প্রস্রাবে রক্ত আসে কোথা থেকে। মূত্রতন্ত্রের যেকোনো স্থান থেকেই রক্ত আসতে পারে। যেমন- কিডনি, মূত্রথলি, মূত্রনালি।

৬. অণ্ডকোষে পিণ্ড দেখা দেওয়া

অণ্ডকোষ ফুলে যাওয়া বা পিণ্ড দেখা দেওয়া পুরুষের অতি পরিচিত সমস্যার মধ্যে একটি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিণ্ডটা নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে এটা অণ্ডকোষে ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। যদি পিণ্ড দীর্ঘস্থায়ী হয়, ব্যথা করে কিংবা আগের পিণ্ডগুলোর তুলনায় অন্যরকম মনে হয়, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রতিটা পুরুষের উচিত মাঝে মাঝে তাদের অন্ডকোষে হাত দিয়ে পরীক্ষা করা। পরীক্ষা করার সময় যদি অন্ডকোষে কোনো পিন্ড বা দলা অনুভব করেন তাহলে খুব শীঘ্রই আপনার নিকটবর্তী ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

৭. ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া

গন্ধের অনুভূতি না পাওয়াকে অ্যানোসমিয়া বলে। গন্ধের অনুভূতি না পাওয়ার সমস্যাটি অস্থায়ী বা স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত ঠান্ডা অথবা অ্যালার্জি হলে নাকের আবরণে যন্ত্রণা হয় এবং গন্ধের অনুভূতি অস্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়, একে অস্থায়ী অ্যানোসমিয়া বলে। মারাত্মক কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে স্থায়ীভাবে ঘ্রাণশক্তি লোপ পেতে পারে। সাধারণত ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়ার সমস্যাটি হয়ে থাকে বৃদ্ধ বয়সে। অ্যানোসমিয়া হলে পর্যায়ক্রমে ক্ষুধা কমে যায়, পুষ্টির ঘাটতি হয় এবং এনার্জি কমে যায়। গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া স্নায়বিক সমস্যা, ভাইরাসজনিত রোগ ও অন্তঃস্রাবী গ্রন্থির অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে।

৮. ঘুমের সময় জোরে জোরে নাক ডাকা

ঘুমের সময় অনেকেই জোরে জোরে নাক ডাকে। নাক ডাকা সমস্যা হলেও এটি যেন বড় সমস্যায় পরিণত না হয় তার জন্য শুরুতেই সচেতন থাকতে হবে। তা হলে ধীরে ধীরে নাক ডাকা কমে আসবে। তার জন্য শরীরের ওজন কমাতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে, ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

৯. যৌনক্ষমতা কমে যাওয়া

বয়স বাড়ার সঙ্গে পুরুষের যৌনক্ষমতা কমতে থাকে। তবে ‘জার্নাল অফ সেক্সুয়াল মেডিসিন’য়ের এক গবেষণা বলছে, চল্লিশে পা দেওয়ার আগেই প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তাজনীত সমস্যা দেখা যায়। মানে, শুধু বয়স নয়, মানসিক দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, ডায়বেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদিও যৌনক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।

১০. পুরুষাঙ্গের আকৃতিতে পরিবর্তন

শক্ত অবস্থায় পুরুষাঙ্গ কিছুটা বাঁকানো থাকাটাই স্বাভাবিক এবং জন্মগত। তবে শক্তাবস্থায় পুরুষাঙ্গের আকৃতিতে নতুন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়লে, ব্যথা বা যে কোনো অস্বস্তি দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটি হতে পারে ‘পেরনি’স’ রোগের লক্ষণ। এই রোগে পুরুষাঙ্গে কোলাজেন দলা পাঁকিয়ে যায়, ফলে পুরুষাঙ্গ বাঁকা হয়ে যায়, সঙ্গমের সময় ব্যথাও হতে পারে। সাধারণত কয়েক মাসের মধ্যে এটা আপনাতেই সেরে যায়। তবে জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

১১. পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে ব্যথা

এটি গেঁটেবাতের লক্ষণ। রোগটি নারী-পুরুষ দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে পুরুষের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুন বেশি। বিশেষত, বয়স্ক পুরুষদের প্রতি সাতজনের মধ্যে একজনের এই সমস্যা দেখা দেয়। যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ১৬ জনের মধ্যে একজন। হাড়ের জোড়ে বাত হওয়াকে গেঁটেবাত বলা হয়, যা পায়ের বুড়া আঙ্গুলেই বেশি হয়। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হওয়ার কারণে রক্ত ও হাড়ের জোড়ার চারপাশে সোডিয়াম সালফেটের স্ফটিক জমা হয়, ফলে গেঁটেবাত দেখা দেয়। সমস্যা মারাত্বক অবস্থা ধারণ করলে আক্রান্ত হাড়ের জোড়া স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

১২. ম্যান বুবস

পুরুষের বুকে নারীদের মতো স্তন হওয়া তিনটি বিষয় ইঙ্গিত করে। প্রথমত- ওজন বেশি, সমাধান ওজন কমানো। দ্বিতীয়ত- ‘গাইনাকোমাস্টিয়া’, যা মূলত ‘টেস্টোস্টেরন’ ও ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। এজন্য চাই চিকিৎসকের পরামর্শ। তৃতীয়ত- যকৃতের সমস্যা। যকৃতের সমস্যা হলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, ফলে দেখা দেয় ‘গাইনাকোমাস্টিয়া’। বয়স্কদের ‘ম্যান বুবস’ হওয়াটা অণ্ডকোষের সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।

আরএম-০৫/১৬/০২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)