কাপড়ে যতক্ষন জীবিত থাকতে পারে করোনাভাইরাস

কাপড়ে

মানুষ এখন ভাবছে, করোনা মানেই মৃত্যু! করোনায় যারা মারা গেছে, তাদের ৫০ ভাগের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। আর ৩০ ভাগের বয়স ৬০-৬৯-এর মধ্যে। মানে, ৮০ ভাগ লোক যারা মারা গেলেন বা যাচ্ছেন, তাদের গড় বয়স ৬০-৭০-এর ঊর্ধ্বে। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, এই করোনায় বৃদ্ধরাই মারা যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। না, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বৃদ্ধ হলেই যে করোনায় মারা পড়ছে, তা কিন্তু নয়।

বৃদ্ধদের মধ্যে করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন, তারা প্রায় সবাই আগে থেকেই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত, যেমন-অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, অ্যাজমা, সিওপিডি, লিভারের রোগ। এ ছাড়া যারা ধূমপান করেন, যারা ফুসফুসে কোনো আঘাত পেয়েছেন যাদের কেমোথেরাপি (ক্যান্সারের চিকিৎসা) অথবা অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।

গর্ভবতী মায়েদের শারীরবৃত্তীয় ও প্রতিরোধমূলক পরিবর্তন হওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তবে গর্ভবতী মা করোনায় সংক্রমিত হলেও গর্ভস্থ শিশু করোনা সংক্রমিত হয় না, এমনকি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে উচ্চমাত্রার জ্বর থাকলে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মাতে পারে।

সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের সবল, তাদের ক্ষেত্রে করোনায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই, আশাহত হবেন না। মনে জোর রাখুন।

করোনাভাইরাস মানব শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় হাঁচি ও শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। ফুসফুসে সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও ততই বাড়তে থাকে। বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে বুকের ব্যথার ধরন একেবারে আলাদা। গভীর বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে।

মূলত ফুসফুসে সংক্রমণজনিত প্রদাহের ফলে এই ব্যথা হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের জ্বর নাও থাকতে পারে। করোনাভাইরাস বিস্ফোরণ ঘটায় আচমকাই। শুরুটা হয় সর্দি-কাশি ও জ্বর দিয়ে। জ্বর নাও থাকতে পারে। শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। কাবু করে নিউমোনিয়া।

অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা দেয় সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম। ভাইরাসের শান্তি হয় না তাতেও। ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে। পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে (প্রথম কিডনি বিকল হয়) মৃত্যু হতে পারে।

যেহেতু এই ভাইরাসটি বাতাসে নয়, মাটিতে অবস্থান করে, তাই এটা বাতাসে ছড়ায় না। কোনো ধাতব তলে বা বস্তুতে ভাইরাসটি পড়লে প্রায় ১২ ঘণ্টা জীবিত থাকতে পারে। তাই সাবান দিয়ে হাত ধুলেই যথেষ্ট হবে। কাপড়ে এই ভাইরাসটি প্রায় ৯ ঘণ্টা জীবিত থাকতে পারে।

তাই, কাপড় ধুয়ে নিলে বা রোদে ২ ঘণ্টা থাকলে এটি মারা যাবে। হাতে বা ত্বকে এই ভাইরাসটি ১০ মিনিটের মতো জীবিত থাকতে পারে। তাই, অ্যালকোহল মিশ্রিত জীবাণুনাশক হাতে মেখে নিলেই জীবাণুটি মারা যাবে। করোনা গরম আবহাওয়ায় বাঁচে না। ৭০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা এটিকে মারতে পারে।

কাজেই, ভালো না লাগলেও এখন বেশি বেশি গরম পানি পান করবেন, আইসক্রিম থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন। লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে গারগল করলে গলার মিউকাস পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টনসিলের জীবাণুসহ করোনাও দূর হবে, ফুসফুসে সংক্রমিত হবে না।

নাকে-মুখে আঙ্গুল বা হাত দেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ, মানব শরীরে জীবাণু প্রবেশের সদর দরজা হলো নাক-মুখ-চোখ। মাস্ক তখনই পরতে হবে যখন কেউ নিজে করোনাভাইরাসের মতো উপসর্গ অনুভব করবেন (যেমন সর্দি, জ্বর ও কাশি) অথবা কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও সেবা প্রদান করছেন তখন।

সর্দি-কাশি ও জ্বর হলে জন্মদিন বা এরকম কোনো অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ঘরে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ ধুয়ে নিন। কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন। ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করুন।

আরএম-০৮/১৯/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)