জ্বর, কফ, ব্যথা ও রোগ-জীবাণু ধ্বংসের মহৌষধ যে বীজ

রোগ-জীবাণু

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালোজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করে। এর সঙ্গে একটি হাদিস জড়িত আছে।

হাদিসটি হলো- ‘..আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘এ কালোজিরা সাম ব্যতীত সমস্ত রোগের নিরাময়। আমি বললাম, সাম কি? তিনি বললেন. মৃত্যু!’ (বুখারী: ৫৬৮৭)।

কালোজিরা পরিচয়: কালোজিরা বা নাইজেলা সিডে ১৫টি অ্যামোইনো এসিড আছে। এছাড়াও কালোজিরায় ২১ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে ও ৩৮ শতাংশ শর্করা আছে। নিয়মিত কালোজিরা সেবনে স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং স্পার্মের গুনাগুণ বাড়ে।

কালোজিরার বৈশিষ্ট কি এবং এর স্বাস্থগত গুনগুলো: ভীষণ উপকারী জিনিস কালোজিরা। এটাকে খাবার না বলে পথ্য বলাই ভালো। গরম ও ঠান্ডাজনিত কারণে অনেকের জ্বর হচ্ছে। জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু।

এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়। যারা মোটা হতে চান, তাদের জন্য কালোজিরা যথাযোগ্য পথ্য। আবার যাদের শরীরে পানি জমে হাত-পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাদের পানি জমতে বাধা দেয়।

কালোজিরা শরীরের জন্য খুব জরুরি। সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালোজিরা পিষে খেলে শিশু দুধ খেতে পাবে বেশি পরিমাণে। কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না। আমাদের মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে।

কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে। খুব বেশি কালোজিরা খেলে হিতে বিপরীত হবে। আর যারা কালোজিরা হজম করতে পারেন না, তারা খাবেন না।

কালোজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে। তারুণ্য ধরে রাখে দীর্ঘকাল। আমাদের কাজ করার শক্তিকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্যও কাজ করে। তাই প্রতিদিন অল্প করে ভাত বা রুটির সঙ্গে খেতে পারেন কালোজিরা।

কালোজিরার মাহাত্ম: কালোজিরার আমাদের অতি পরিচিত একটি জিনিস। রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, ‘একমাত্র মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ওষুধ এই কালোজিরা’ -আল হাদিস।

প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ খাবারের সঙ্গে ‘কালোজিরা’ গ্রহণ করে আসছে।সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন যে কালোজিরার সব গুণ লুকিয়ে আছে এর তেলে। সাধারণত আমরা খাবারের সঙ্গে মসলা হিসেবে অথবা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে কালোজিরা খেয়ে থাকি। কিন্তু এভাবে আমাদের স্বাস্থ্য কালোজিরার আসল গুণাবলি থেকে বঞ্চিত হয়। তাই কালোজিরা নয়, বরং কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য নানাভাবে উপকারী।

কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে। এছাড়া মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি মতে কালোজিরা নানাবিধ রোগ-নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইউনানি মতে- নারীর ঋতুস্রাবজনীত সমস্যায় কালোজিরা বাটা খাওয়ার বিধান আছে। এছাড়া প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য, প্রসবোত্তর কালে কালিজিরা বাটা খাওয়ার বিধান আছে। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালিজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা খাওয়া হয়। তিলের তেলের সঙ্গে কালোজিরা বাঁটা বা কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগলে, ফোড়ার উপশম হয়। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালোজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।

এছাড়া অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালোজিরা সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কালোজিরা মশলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। এর বীজ থেকে পাওয়া তেল পাওয়া যায়। তবে পুরানো কালিজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

কালোজিরার অশেষ গুণ: হজমের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে এক-দুই চা-চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন দু-তিনবার খেলে এক মাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপাভাবও দূর হবে।

এক চা-চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হয়। সর্দি বসে গেলে কালিজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন। একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুকতে থাকুন, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে। আরো দ্রুত ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করুন।

যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন।

ডায়াবেটিকদের রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মাথাব্যথায় ভুগছেন? কোনো চিন্তা নেই। কপালের দুই পাশ এবং কানে পাশে দিনে তিন-চারবার কালোজিরার তেল মালিশ করুন।

স্মরণ শক্তি বাড়াতে চান? তাহলে নিয়মিত কালোজিরা খান। এটি মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার দরুন স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে এটি প্রাণশক্তি বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে।

লিভারের সুরক্ষায় ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে কালোজিরা।

মাথায় নতুন চুল গজানোর উপায়! চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন? কালোজিরা খেয়ে যান, চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে। আরো ফল পেতে চুলের গোড়ায় এর তেল মালিশ করতে থাকুন।

কালোজিরার তেল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি দূর করে। এছাড়া হূদরোগ নিরাময়ে এ তেল মহৌষধ হিসেবে বিবেচিত।

আরএম-২৩/২৬/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)