করোনা রোগীকে দাফনে এলাকার ঝুঁকি কতটুকু?

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ থেকে করোনা ছড়ানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন অনেকেই। যার কারণে অনেক জায়গাতেই দাফনে আসছে বাঁধা।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে, তার লাশের সৎকার করা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল মেনেই কাজ করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনে সম্ভাব্য কোন ঝুঁকির কথাও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় উল্লেখ নেই। এ ধরণের রোগীর ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক সৎকারে করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরাও কোনো ঝুঁকি দেখছেন না।

বাংলাদেশের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা এই ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলার সিভিল সার্জন অথবা সরাসরি আইইডিসিআর-এ অবহিত করতে হবে।

সংস্থাটি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় লাশের গোসল থেকে শুরু করে সেটা প্যাকেট করা এবং পরিবহনের ব্যবস্থাও করে থাকে।

আইইডিসিআর -এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর জানান, রোগী যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন বা তার লক্ষণগুলো যদি করোনাভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায় তাহলে ধর্মীয় বিধি মেনে বিশেষ সতর্কতার সাথে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এক্ষেত্রে তিনি রোগীর মৃত্যু এবং তার লাশ দাফনের আগ পর্যন্ত পুরো সময়টিতে সর্বোচ্চ সতর্কতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

আলমগীর বলেন, ‘আইইডিসিআর এর প্রশিক্ষিত লোকজনই লাশের গোসল করিয়ে দেবে। এরপর লাশ কাফনের কাপড়ে জড়িয়ে বিশেষভাবে প্যাকেট করবে, যেন ভেতরের কোনো ভাইরাস বাইরে সংক্রমিত না হয়। মৃতদেহ বহনকারী সেই ব্যাগটি কাউকে খুলতে দেয়া হবে না।’

এরপর লাশটি একটি সিল করা বাক্স বা কফিনে করে নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। লাশটি পরিবহন করতে হবে বিশেষ সতর্কতার সাথে। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের প্রত্যেককে প্রতিরোধমূলক পোশাক পিপিই পরিধান করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাধারণত কবর দেয়ার পর লাশটি থেকে ভাইরাস সংক্রমণের কোন সুযোগ থাকেনা। কবরের আশেপাশের মাটি বা পাশে কোনো জলাশয় থাকলেও এই ভাইরাস সংক্রমণ হবে না বলে তিনি জানান।

আইইডিসিআর এর কর্মকর্তারা এরপরও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে কবরের চারিদিকে ভালভাবে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেন।

দাফনের আগ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি যে ঘরে ছিলেন, যেখানে তার গোসল করানো হয়েছে, যে পরিবহনে তাকে তোলা হয়েছে বা যেসব জায়গায় লাশ রাখা হয়েছে – সব জায়গা জীবাণুমুক্ত করার ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি দ্রুত কবর দিয়ে দিতে। লাশটি কিভাবে পরিবহন করা হচ্ছে, দাফন কাজ কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে সেটা নিয়ে মানুষ সচেতন হতে পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে কবর দিতে বাধা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।একবার কবর হয়ে গেলে বৈজ্ঞানিকভাবে কোন ঝুঁকি থাকেনা। ঝুঁকি যা থাকে সেটা কবর দেয়ার আগে’

লাশের সৎকার কাজের সময় ভিড় না করা এবং জানাজা নামাজের সময় অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা জানান তিনি।