ডেঙ্গু জ্বরে সুস্থ থাকতে যেসব খাবার খাবেন

করোনার পাশাপাশি সারাদেশে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। এই জ্বরে আক্রান্ত হলে একদিকে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে অন্যদিকে এর প্রভাব শরীরে থেকে যায় দীর্ঘদিন। তবে বিশ্রাম ও নিয়ম মেনে চললে এর থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়াও সম্ভব।

ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা এবং এই ভাইরাস বাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোর‍্যাজিক ফিভারে পরিণত হয়। যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে রূপ নেয়। যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। অনেকেই প্রথম প্রথম সামান্য জ্বর বলে পাশ কাটিয়ে গেলেও, এর প্রভাবে দীর্ঘদিন ভোগেন। কমে যায় ইমিউনিটিও।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশ কম। কিন্তু সুস্থ হতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। তবে ওষুধ ও সঠিক চিকিৎসার আওতায় এলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যান অধিকাংশেরও বেশি। তবে কিছু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি এই সময় মেনে চললে জ্বরের আশঙ্কা কমে যায় অনেকখানি।

ডেঙ্গুর হবার পরে ডাক্তাররা ভীষণ সাবধানে থাকতে বলেন। এই অসুখে রোগী দুর্বল হয়ে পড়েন। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি পান না। ফলে পুরোপুরি সেরে উঠতেও বেশ অনেকটা সময় লেগে যায়।

ওষুধের পাশাপাশি খাওয়া দাওয়ার দিকেও তাই এসময় বিশেষ নজর দিতে বলেন ডাক্তারেরা। জ্বর সারার পরেও সুস্থ হতে দেরি হয়। সেটা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার কারণেই। তাই সেদিকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের পরিবারের অন্যান্য লোকেদের খেয়াল রাখতে বলেন।

জানেন কি আপনার রান্নাঘরেই এমন অনেক কিছু আছে, যা নিয়মিত খেলে ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠতে পারবেন! শাক সবজি, ফল এমনিতেই সবসময় খেতে বলেন ডাক্তারেরা। এই সময় বিশেষ কিছু ফলের রস খেলেও এনার্জি পাবেন।

পেঁপে পাতার রস

ফল হিসেবে পাকা পেঁপে শরীরের জন্য খুবই উপকারী সেটা সকলেই জানি। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে পেঁপে পাতার রস কতটা উপকারী সেটা আবার অনেকেই জানেন না।‌ এই রস নিয়মিত খেলে জ্বর ধীরে ধীরে কমে যায়, শরীরে প্লেটলেট কাউন্ট বাড়ে, এমনকি ইমিউনিটি ব্যুস্ট ও হয়। বাড়ির আশেপাশে একটা দু’টো পেঁপে গাছ তো থাকেই। তারই পাতা কুচিকুচি করে কেটে ব্লেন্ডারে অল্প জল দিয়ে মিশিয়ে রস তৈরি করতে পারেন। দিনে অন্তত দুবার এটা খাবেন।

সবজির রস

সবজি তো ভিটামিনে ভরপুর। সারাবছর বিভিন্ন রকমের সবজিতে বাজার ছেয়ে থাকে। জ্বর হোক বা না হোক যেকোনও একধরনের সবজি রোজ খাওয়া উচিত। ডেঙ্গুর জ্বরে যদি আক্রান্ত হন, তাহলে নিজের পছন্দমতো সবজির রস করে এই সময় খেতে পারেন। স্বাদ বদলের জন্য অল্প লেবুর রসও দিতে পারেন। লেবুতে ভিটামিন সি থাকে। সেটা শরীরের ইমিউনিটি ব্যুস্ট করে।

হার্বাল টি

বাজারে এখন নানারকম ফ্লেভারের চা পাওয়া যায়। তুলসি, আদা, দারুচিনি, প্রভৃতি সমৃদ্ধ। এগুলো নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়। সাধারণত জ্বরের পরে অনেকেই খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সময় এই ধরণের চা খেলে শরীর মন দুটোই চাঙ্গা থাকে।

নিম পাতার রস

ছোট থেকেই অনেকে দেখে এসেছি বাড়িতে কারোর জ্বর বা সামান্য শরীর খারাপ হলেই নিম পাতার রস খাওয়ানো হত। নিমপাতার ঔষধি গুণ নিয়ে করোর মনে একটুও সংশয় নেই। জানেন কি, ডেঙ্গু জ্বরেও সমান উপকারী! এই রস শরীরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। দিনের শুরুতেই ডাক্তাররা এটা খেতে বলেন।

হলুদ

হলুদ শরীরে মেটাবলিজম ব্যুস্ট করে। ডাক্তাররা এর গুণাবলির জন্যই গোল্ডেন মিল্ক বা হলুদ মেশানো দুধ খেতে সাজেস্ট করেন। অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন না। তারা জলে অল্প হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে দ্রুত সুস্থ হবেন।

আমলকির রস

আমলকি ভিটামিন এ ও সি তে ভরপুর। বাজারে সারাবছরই এখন আমলকি পাওয়া যায়। অনেক সময় ভিটামিন সি ট্যাবলেট পাওয়া যায় না বলে, তার বদলে দিনে একটা আমলকি খান। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের ট্রেস কমায়। ইমিউনিটি ব্যুস্ট করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

চিকেন স্যুপ

ফ্লু বা জ্বরের সময় ডাক্তাররা দিনে অন্তত একবার চিকেন স্যুপ খেতে সাজেস্ট করেন। এটা শরীর হাইড্রেটেড রাখে। আবার জ্বরের সময় অনেকেই মুখে খাবারের স্বাদ পান না ঠিকমতো। তাদের চিকেন স্যুপ খেতে বলেন।

তেলেভাজা যেকোনও কিছু, কোল্ডড্রিংকস, ফাস্টফুড, কফি,ফ্যাটজাতীয় যেকোনও খাবার জ্বরের সময় খাবেন না।

আরএম-১৫/১২/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)