করোনার মধ্যে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি: লক্ষণ ও উপসর্গ কী? বাঁচতে করণীয়

করোনার মহামারির সময়ে নিউমোনিয়া এখন বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসছে শীত আর শীতের সাথে সাথে এই রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। নিরব এই ঘাতক রোগের বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউমোনিয়ার জীবাণু মানুষের ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এবং টিবির জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া ছড়ায়।

শীতকালে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। আর এসব কারণেই বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিউমোনিয়া এক আতঙ্কের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলুন জেনে নেই নিউমোনিয়া কেন হয়, কীভাবে বুঝবেন আপনার নিউমোনিয়া হয়েছে কি-না আর এই নিউমোনিয়া যদি হয়েই থাকে, তাহলে করণীয় কী?

কী কী ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে?

নিউমোনিয়া হচ্ছে শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ যা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একাধিক ধরনের সংক্রমক জীবাণু আক্রামণে নিউমোনিয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার এবং ফাঙ্গাস।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞের মতে, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার ছাড়াও টিবি রোগের কারণে নিউমোনিয়া হয়। এর মধ্যে যেগুলো দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছে স্প্রেপটোককাস নিউমোনিয়া, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি, রেসপিরেটরি সিঙ্কশাল ভাইরাসের আক্রমণে ভাইরাল নিউমোনিয়া, নিউমোসিসটিস জিরোভেসির কারণে নিউমোনিয়া।

শিশুদের মধ্যে যে ধরনের নিউমোনিয়া হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় স্প্রেপটোককাস নিউমোনিয়া। হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি পুরো বিশ্বের মধ্যে এটি নিউমোনিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। রেসপিরেটরি সিঙ্কশাল ভাইরাসের আক্রমণে ভাইরাল নিউমোনিয়া হয়। এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া নিউমোসিসটিস জিরোভেসির কারণে সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।

নিউমোনিয়ার কারণ ও ঝুঁকিগুলো কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে সব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পুষ্টিহীনতার কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া যে সব শিশু জন্মের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে বা একেবারে মায়ের বুকের দুধ পায় না তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।

এছাড়া অপরিণত শিশু জন্মের হার বেশি হওয়ায় এ ধরনের শিশুদের নিউমোনিয়া হয়ে মৃত্যুর হারও বেশি।

এদিকে, আগে থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে যেমন- এইচআইভি বা হাম উঠলে তাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

এছাড়া পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যেমন- ঘরের ভেতর জ্বালানি বা কাঠ খড়কুটোর ধোঁয়া, ঘরের ভেতর অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ বাস করলে, বাবা-মায়ের ধূমপানের করলে শিশুর নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো কী?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে যে নিউমোনিয়া হয় সেগুলোর উপসর্গ একই রকমের তবে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার তুলনায় ভাইরাল নিউমোনিয়ায় উপসর্গ বেশি থাকে। ভাইরাস সংক্রমণ হলে শ্বাস নেয়ার সময় শব্দ হয়। মারত্মকভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতকদের অনেক সময় খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জ্ঞান হারালে খিচুনি, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, দু মাস বা এর কম বয়সী শিশু শান্তভাবে শুয়ে থাকার সময় তার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি মিনিটে ৬০ এর বেশি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে তার নিউমোনিয়ার হয়েছে।

দু মাস থেকে এক বছরের শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের উঠা-নামা মিনিটে ৫০ বারের বেশি হয় এবং এক বছর থেকে ৫ বছরের বেশি বয়সের শিশুর এই মাত্রা যদি ৪০ বারের বেশি থাকে তাহলে শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

এছাড়া শিশুর যদি পাঁজর ভেঙে ভেতরে ডুকে যায় বা শ্বাস নেয়ার সময় বুক ফুলে না উঠে যদি ভেতরে ঢুকে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে সেটি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। সেই শিশু নেতিয়ে পড়ারও লক্ষণ থাকে। পালস অক্সিমিটারের শিশুদের দেহের অক্সিজেনের মাত্রা যদি ৯২ বা তার নিচে নেমে যায় তাহলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। এসব ণক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নিউমোনিয়া হলে কী করবেন?

চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়া চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বেশিভাগ ক্ষেতে মুখে খাবারের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে মাঝারি বা মারত্মক ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়। এ সময় ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়টিক বা অক্সিজেন দেয়া দরকার হতে পারে।

নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে করণীয়

শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করাটা অত্যন্ত জরুরি। হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি, এইচআইভি, নিউমোককাস, হাম এবং হুপিংকাশি প্রতিরোধ করতে হবে।

শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকাসহ অন্যান্য রোগের টিকা সঠিক সময় দিতে হবে।

শিশুদের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতায় শক্তিশালী করতে হলে পর্যাপ্ত পুষ্টি সম্পন্ন খাবার দিতে হবে।

নবজাতকে প্রথম ৬ মাস অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ঘরের ভতরে বাতাস যাতে বিশুদ্ধ হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। এটা নিউমোনিয়া ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনে।

শীতকালে শিশুদের আর কী কী ধরনের শ্বাসকষ্ট হয়

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, শীতকালে মৌসুম শুষ্ক হওয়ার কারণে দুলাবালির পরিমাণ বাড়ে।

ঘরের ভেতরটা একটু স্যাঁত স্যাঁতে থাকে। এমন পরিবেশের কারণে শিশুদের অ্যালার্জি জনিত শ্বাসকষ্ট বেশি হয়। এটা দু ধরনের হয়। নাকের উপরের অংশের অ্যালার্জি এবং ফুসফুসের অ্যালার্জি। ফুসফুসের অ্যালার্জিকে অ্যাজমা বলা হয় যা শীতকালে বেড়ে যায়। এছাড়া শীতকালে বাংলাদেশে কখনও কখনও ব্রংকলাইটিজ জনিত একটা ভাইরাস রোগ বেড়ে যায়।

আরএম-১২/১৮/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)