শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে যেসব রোগ হতে পারে

আয়রনের

আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। রক্তে এক ধরনের ব্লাড সেল থাকে যা রক্তে অক্সিজেন সঞ্চালনে সাহায্য করে। সাধারণত শরীরে মিনারেলের অভাব দেখা দিলে আয়রনের অভাব দেখা যায়। আয়রনের অভাবে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়।

যদি আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে বিভিন্ন অসুখ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন প্রায়শই আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য সেই সময়ে হবু মায়ের সঠিক উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। যদি দীর্ঘদিন ধরে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। শরীরে দুর্বলতা দেখা দেবে, ক্লান্ত লাগবে সারাক্ষণ। এছাড়াও অ্যানিমিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

আয়রনের ঘাটতি হলে মাথার যন্ত্রণা, ক্লান্তি, চোখে আবছা দেখার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শ্বাস নেওয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। ত্বকের রংও ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। নখের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বুকে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চিন্তাশক্তিও হ্রাস পায় আয়রনের ঘাটতি হলে।

শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে গেলে অ্যানিমিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যানিমিয়া হলে ক্লান্তি, কাজ করার শক্তি চলে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই সময়ে রোজকার তালিকায় আয়রন সম্পন্ন খাবার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যানিমিয়ার অর্থ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে সারাদিন ক্লান্তি, দুর্বলতা, কাজ করতে ইচ্ছে না হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

অন্তঃসত্ত্বা কোনও মহিলার শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সন্তানের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি প্রিম্যাচিওর বার্থও হতে পারে সন্তানের।

আয়রনের ঘাটতির প্রভাব ত্বকে এবং চুলেও পড়ে। ত্বক শুষ্ক, নিষ্প্রাণ এবং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। চুল পড়া, খুসকির সমস্যাও দেখা দেয় আয়রনের ঘাটতির কারণে।

আয়রনের ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রাকৃতিক উপায়ে যেসব খাবার খাবেন

সবুজ শাকসবজি

প্রতিদিন পালং শাক, সবজি, স্যুপ খান। পালং শাকে আয়রন রয়েছ প্রচুর। এছাড়াও ছানা বা পনির, ডিম, চিকেন, কলিজা খেলেও শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন পাবেন।

আপেল

আপেলে আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি। একটি মাঝারি আকারের আপেলে রয়েছে শূন্য দশমিক তিন এক মিলিগ্রাম আয়রন। এটি হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। ডেজার্ট, সালাদ অথবা স্মুদি তৈরিতে আপেল ব্যবহার করতে পারেন।

ড্রাই ফ্রুট

সকালের খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন কিশমিশ, অ্যাপ্রিকট, কাজু বা আমন্ড। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা শরীরকে আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। সকালের খাবার ছাড়াও দিনের অন্য সময় এক মুঠো বাদাম আপনার আয়রনের ঘাটতি মেটাতে পারে।

ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেট আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এতে প্রচুর আয়রন রয়েছে। ডার্ক চকলেট শুধুমাত্র আয়রনের ঘাটতিই পূরণ করেনা, স্ট্রেস কমায় এবং ত্বক ও চুল ভালো রাখে।

ডাল

ডাল প্রায় প্রতিদিনই থাকে অনেকের খাবারের তালিকায়। সিদ্ধ বিন সাত থেকে নয় মিলিগ্রাম পর্যন্ত আয়রন জোগাতে পারে শরীরে। এক কাপ ছোলায় রয়েছে তিন থেকে পাঁচ মিলিগ্রাম আয়রন। সিদ্ধ ডালের পানি প্রতিদিন খেলে উপকার পাবেন।

সয়াবিন

সয়াবিন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়ামের ভালো উৎস। নিয়মিত সোয়াবিন খেলে হার্টের অসুখ, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। ভালো থাকে হাড়ের স্বাস্থ্যও।

খেজুর

আয়রনের খুব চমৎকার একটি উৎস হলো খেজুর। এর মধ্যে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬। খেজুরের মধ্যে রয়েছে আঁশ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখতে পারেন।