পাইলস বা অর্শ রোগে করণীয়

পাইলস

তীব্র যন্ত্রণাদায়ক রোগগুলোর মাঝে পাইলস বা অর্শ অন্যতম। পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারে এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। শিশুসহ যে কোন বয়সের লোকই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এই রোগ মলদ্বারের ভেতরে কিংবা বাইরেও হতে পারে। পাইলস হলে চুলকানি বা মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। লজ্জায় অনেকে বিষয়টিকে দীর্ঘদিন গোপন করে রাখে কেউবা মনে করেন গোপন রোগ। ফলে ভুল চিকিৎসার শিকার হন যা স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে। আসুন জেনে নেই পাইলস রোগের লক্ষন, কারণ এবং সমাধানের উপায়।

পাইলস বা অর্শ কি?

পাইলস শব্দটির অর্থ পিলার। মেডিকেলের ভাষায় একে হেমোরয়েড বলা হয়ে থাকে। পাইলস রোগটির সাথে কমবেশি সবারই পরিচিতি রয়েছে। এটি মানুষের মলদ্বারের রোগ। এই রোগটিতে মলদ্বারের আশে পাশের রক্তনালীগুলো ফুলে ব্যথার সৃষ্টি করে। এ রোগে মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে, চারপাশে বা একপাশে, একটি বা একাধিক, গোলাকৃতি বা সুচাল গুটিকা দেখা দেয়। এ গুটিকাগুলোকে ‘বলি’ বা ‘গেজ’ বলা হয়। প্রতিটি সুস্থ্য মানুষের মলদ্বারের অভ্যন্তরে এর আবরণী (মিউকাস মেমব্রেন অথবা চামড়া)-র নীচে বিভিন্ন ধরণের রক্তনালী ও যোজক কলার (কানেকটিভ টিস্যু) সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি কুশন বা নরম মাংস পিণ্ড থাকে যেগুলি পরস্পরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সংলগ্ন থেকে মলদ্বারের মধ্য দিয়ে মল ও বায়ুর নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে রক্তনালিগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। নানাবিধ কারণে এই কুশনসমূহ স্ফীত হতে পারে বা ফুলে ঊঠতে পারে এবং এদের ন্থানচ্যুতি হতে পারে। এই স্ফীত ও স্থানচ্যুত রক্তনালীর কুশনগুলিই পাইলস বা অর্শ।

একজন রোগী কিভাবে বুঝবেন তিনি এই সমস্যায় আক্রান্ত?

অনেক ভাবেই রোগী বুঝতে পারেন তবে বিশেষ লক্ষনগুলোর মাঝে-

• কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা থাকে।

• মলদ্বার দিয়ে রস নির্গত হওয়া যা মলত্যাগের আগে ও পরে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে থাকে।

• মলদ্বার বেরিয়ে আসা।

• রক্ত শূন্যতা, মলদ্বারে ব্যথা ইত্যাদি।

• মোশনের সময় ব্যথা ছাড়া বা ব্যথাযুক্ত রক্তক্ষরণ।

• পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হতে পারে। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় যায় আবার কখনো তীরের বেগে যায়।

• মলদ্বারের বাইরে ফুলে যায় যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।

• মলদ্বারের ফোলা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে আবার নাও পারে। অনেক সময় বের হলে তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। আবার কখনও কখনও বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না অথবা প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বেরিয়ে আসে।

রোগী কখন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হবেন?

উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র যেমন- পায়খানার রঙ কালো বা লালচে হলে এবং পায়খানার সাথে রক্ত গেলে এবং পায়ুপথের মুখে পায়খানার সময় বা পরে চাকা অনুভব করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এ রোগে কি ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে?

অবহেলা করে চিকিৎসা না করালে মলদ্বারে আলসার, গ্যাংগ্রিন, ফোঁড়া বা এবসেস, থ্রম্বোসিস ইত্যাদি জটিলতার সৃষ্টি হয়।

অপারেশন ছাড়া প্রাথমিক ভাবে কি চিকিৎসা গ্রহন করা যেতে পারে?

বেশ কিছু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী অর্শ বা পাইলস রোগের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট বাজারজাত করেছে, যা ১ম ও ২য় ডিগ্রি পাইলসে কার্যকর এবং তৃতীয় ডিগ্রীর পাইলস-এর অপারেশনের বিকল্প চিকিৎসা নাই। একজন রোগী কত ডিগ্রী পাইলস-এ আক্রান্ত একজন সার্জন মলদ্বার পরীক্ষা করে বলতে পারেন। কাজেই উপরের যে কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুতই একজন সার্জন বা শল্যচিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ঔষধ এবং শল্য চিকিৎসা ছাড়া পাইলসের আর কোন চিকিৎসা আছে কি?

ঔষধ এবং শল্য চিকিৎসা ছাড়া পাইলসের আরো যেসব চিকিৎসা আছে সেগুলো হলো:

• রাবার ব্যান্ড লাইগেশন (Rubber band ligation)

• ইনজেকশন (Scleo therapy)

• কোয়াগুলেশন (ইনফ্রারেড, লেজার, বাইপোলার) Coagulation (infrared, laser or bipolar)

পায়ুপথের নানা সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য পরামর্শ-

১, কোঁথ দিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

২, প্রচুর সবজি খেতে হবে।

৩। কাশি, হাপানী এবং মুত্রত্যাগে বাধা সৃষ্টি হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হবেন।

ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম, ডিএইসএমএস (ঢাকা) এক্সপার্ট ইন অল্টারনেটিভ মেডিসিন