প্রতিদিন হলুদমিশ্রিত দুধ পানে যত উপকার

হলুদমিশ্রিত

যেকোনো রান্নায় হলুদ স্বাদ বৃদ্ধি করে, একথা সবারই কমবেশি জানা। অন্যদিকে দুধের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাও কম নয়। কিন্তু জানেন কি, ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন হলুদ দুধের সঙ্গে মেশালে এর গুণাগুণ বেড়ে যায় অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকেই হলুদমিশ্রিত দুধ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, শারীরিক ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এক গ্লাস হলুদমিশ্রিত দুধ হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। এছাড়া যেকোন ধরনের সংক্রমণ সারাতেও হলুদমিশ্রিত দুধ বেশ উপকারী।

ঘুমের সমস্যা দূর করে

যাদের ইনসমনিয়া অথবা ঘুমের সমস্যা আছে তারা হলুদমিশ্রিত দুধ পান করতে পারেন। হলুদের দুধ আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। মনে করা হয় যে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উপরও হলুদের প্রভাব রয়েছে। রাতে যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে হলুদের দুধ পান তাদের জন্য খুব উপকারী।

ত্বকে বয়সের ছাপ ঠেকায়

প্রতিদিন নিয়মিত হলুদমিশ্রিত দুধ পান করলে ত্বক সুন্দর থাকে। সতেজ টানটান ত্বক পেতে ও ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া ঠেকাতে হলুদ-দুধ খুব উপকারী। পাশপাশি এটি ব্রণ নিরাময় করতে পারে। গুঁড়া হলুদ সরাসরি ত্বকে লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া হলুদের দুধ হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা থাকা মহিলাদের জন্য এটি বেশ কার্যকর।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত এবং ওজন কমাতে চান তারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করতে পারেন এক গ্লাস গরম গরম হলুদমিশ্রিত দুধ। এটি দেহের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। হলুদে থার্মোজেনিক নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যা শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ক্যালরিও কমায়। হলুদে রয়েছে ফাইবার, যা শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আবার দুধে থাকা প্রোটিন এবং ক্যালশিয়াম একদিকে যেমন শরীরে পুষ্টিবৃদ্ধি করে অন্যদিকে মেদ ঝরিয়ে শরীরকে রাখে সুস্থ ও কর্মক্ষম।

ব্যথা দূর করে

এক গ্লাস হলুদ মেশানো দুধ পান করলে যেকোনো ধরনের মাথাব্যথা উপসম হয়। এটি আর্থাইটিসের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।অনেকের দুধ খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। হলুদ আর দুধ একসঙ্গে খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবও দূর হয়। এছাড়া মাংসপেশির নমনীয়তাও বাড়ায় এটি।

আঘাত ও রোগবালাই নিরাময় করে

দেহের বাইরের বা অভ্যন্তরীণ অংশে কোনো আঘাত থাকলে, হলুদমিশ্রিত দুধ পান করলে এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাময়ে সহায়তা করে। কারণ হলুদ দুধ অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাকটিরিয়াকে বাড়তে দেয় না।

রক্ত পরিশোধন করে ও লিভার সুস্থ রাখে

হলুদমিশ্রিত দুধের আয়ুর্বেদিক উপাদান প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে। রক্ত সঞ্চালনেও সাহায্য করে হলুদমিশ্রিত দুধ। এছাড়া নিয়মিত হলুদমিশ্রিত দুধ পান করলে সুস্থ থাকে লিভার। আর হলুদমিশ্রিত দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হজমের গণ্ডগোল দূর করে দ্রুত হজমে সহায়তা করে এটি।

কীভাবে তৈরি করবেন হলুদমিশ্রিত দুধ

প্রয়োজনীয় উপকরণ

কাঁচা হলুদ : এক ইঞ্চি (টুকরা করা)
তরল দুধ: ২২০ মিলি
চিনি অথবা মধু : স্বাদমতো
গোলমরিচ গুঁড়া: এক চিমটি
প্রতিদিন হলুদমিশ্রিত দুধ পানে যত উপকার

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে একটি পাত্রে হলুদ কুঁচি ও দুধ একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। চুলা থেকে নামিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। গরম থাকতে থাকতেই ছেঁকে মধু অথবা চিনি মিশিয়ে নেবেন। গোলমরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে পরিবেশন করুন হলুদ-দিুধ। চাইলে কাঁচা হলুদের বদলে হলুদ গুঁড়া মিশিয়েও বানাতে পারেন হলুদমিশ্রিত দুধ।