মুখের সাধারণ ঘা হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ!

মুখের

শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতির কারণে মুখে ঘা বা মাউথ আলসার হতে পারে। আর মুখে ঘায়ের সমস্যাকে বেশিরভাগ মানুষ পাত্তা না দিলেও এই অসুখ বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যার নেপথ্যে থাকতে পারে ক্যানসার। তাই সবধান হন এখনই।

এ প্রসঙ্গে ভারতের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অঙ্কোলজির চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ নাথ বলেন, ভারতসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় মুখের ক্যানসার। মুখের ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ হলো মুখের আলসার বা ঘা।

এই চিকিৎসক জানান, মুখের ঘা মোটেও সাধারণ বিষয় নয়। যদিও সাধারণত পেটের অসুখ, ভিটামিনের অভাব ইত্যাদি কারণে মুখে ঘা হতে পারে। তবে কখনো এই সমস্যা থেকে হতে পারে ক্যানসার। এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ দেখলে সচেতন থাকুন-

>> মুখের ঘা অনেকদিন ধরে সারছে না। সমস্যা প্রায় ৬ মাস থেকে ১ বছর রয়ে গিয়েছে। তারপরও ঘা সারছে না।
>> চিকিৎসকের পরামর।ম মেনে ওষুধ খেয়ে সামান্য কমলে আবারও ঘা হলে।
>> মাঝেমমধ্যে ঘা থেকে রক্তপাত হওয়া।
>> খুব ব্যথা হওয়া।

কেন হয় মুখের ঘা?

মুখে এ ধরনের সমস্যার মূল কারণ হতে পারে জর্দা, পানমশালা, পান, সুপারি ইত্যাদি তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন। এ ছাড়াও অনেকের দাঁতের মাথাটা ভেঙে গিয়ে সুঁচালো হয়ে যায়। সেই দাঁতের অংশটি বারবার গালে লেগে ঘা তৈরি হয়। এবার দীর্ঘদিন এই ধরনের ঘায়ের চিকিৎসা না হলে দেখা দিতে পারে ক্যান্সার।

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়?

এ বিষয়ে ডা. পার্থ নাথ জানান, প্রাথমিকভাবে মুখের ভেতরটা দেখেই বোঝা যায়। পাশাপাশি রোগী নিজের সমস্যার কথাও বলতে থাকেন। এরপর সন্দেহ মনে হলে, চিকিৎসক স্ক্র্যাপ সাইটোলজি টেস্ট করেন। এক্ষেত্রে ঘা থেকে থেকে কিছুটা কোষ বের করে আনা হয়।

তারপর ওই কোষগুলোকে মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে দেখা হয় কোনো ক্যানসার কোষ আছে কি না। এরপর ক্যানসার নিশ্চিত হতে করা হয় বায়োপসি। আর ক্যানসার কোন পর্যায়ে আছে, কোথায় কোথায় ছড়িয়েছে জানতে করা হয় সিটি স্ক্যান।

রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে করা হয় সার্জারি। এরপর প্রয়োজন মতো দেওয়া হয় রেডিয়েশন থেরাপি। কেমো থেরাপির এখানে তেমন কোনো ভূমিকা নেই। এই রোগ প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা করা অনেকটাই সহজ। তবে রোগ দীর্ঘদিন হয়ে গেলে চিকিৎসা বেশ কঠিন।

মুখে ঘা হলে যেসব নিয়ম অনুসরণ করবেন-

>> গলার আলসার নিরাময়ে সহায়তা করার জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, যেমন দাঁত ব্রাশ করার পরে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করা। কারণ এর মধ্যেমে ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয় এবং মুখের হাইজিন বজায় থাকে।

>> লেবু, আনারস, টমেটো, কমলা বা এই ধরণের এসিডিক খাবার না খাওয়া, এগুলো ব্যথা বাড়ায়।।

>> ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, আম, স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দই,
>> এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ লবণ মিশ্রিত করে গার্গল করা, এটি এন্টিসেপটিকের মত কাজ করে এবং মুখের অভ্যন্তরভাগ পরিষ্কার করে।

>> শক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন, এগুলো মুখের ক্ষত বাড়িয়ে দিতে পারে।

>> নরম ব্রিসলযুক্ত টুথব্রাশ ব্যবহার করবেন।

>> ঠান্ডা তরল পান করুন বা শীতল কিছু যেমন এক টুকরা আইস মুখে নিয়ে চুষতে পারেন।

>> প্রচুর পরিমান পানি পান করুন।

>> গরম পানিতে লবণ এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে গার্গল করুন।

>> অ্যালকোহল বা তামাক ও তামকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন, এগুলোও জ্বালা বাড়াতে পারে।