দেশে মাঙ্কিপক্স শনাক্তের খবর ‘গুজব’: বিএসএমএমইউ

দেশে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে শনাক্ত হওয়ার যে খবর ছড়িয়েছে তা গুজব বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। সোমবার সন্ধ্যায়এ তথ্য জানান তিনি।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কোনো মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডা. আসিফ ওয়াহিদের বরাত দিয়ে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা গুজব।

এর আগে বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্তের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক প্রোফাইলের তথ্যানুযায়ী, ডা. সরওয়ার জাহান নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক তার ফেসবুক পোস্টে বিএসএমএমইউতে দেশের প্রথম মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানান।

স্ট্যাটাসে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। তবে তার এ পোস্টে ডা. আফিস ওয়াহিদের বরাত দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ডা. সরওয়ার জাহান সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পরবর্তীতে মাঙ্কিপক্স শনাক্তের এ ভুয়া খবর অনেকেই শেয়ার করেন।

জানা গেছে, ডা. আসিফ ওয়াহিদ বর্তমানে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে কর্মরত। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের চলতি বছর মার্চের ভর্তিকৃত রেসিডেন্ট। তিনি ৩৯ বিসিএসএসের স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তা।

এদিকে নতুন করে আরও একটি দেশে ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স। অস্ট্রিয়ায় শনাক্ত হয়েছে এ রোগে আক্রান্ত রোগী। গতকাল ইসরায়েল ও সুইজারল্যান্ড মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে বিশ্বের ১৫টি দেশে ছড়াল রোগটি।

এদিকে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি নিয়ে দেশে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে রোগটি প্রতিরোধে সতর্কতার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মাঙ্কিপক্স সন্দেহজনক ও রোগটির লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের ঢাকায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) তাদের বিষয়ে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সোমবার অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নতুন রোগ নয়। এ রোগকে পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে অ্যান্ডেমিক হিসেবে ধরা হয়। আগে শুধু পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে ভ্রমণকারীদের বা বাসিন্দাদের মধ্যে শনাক্ত হলেও সম্প্রতি ভ্রমণের ইতিহাস নেই, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী এমন ব্যক্তিদের মাঝেও মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।

রোগীদের মধ্যে ফুসকুড়ি দেখা গেলে এবং সম্প্রতি মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে এমন দেশগুলোতে ভ্রমণ করলে অথবা এমন কোনো ব্যক্তি বা লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যাদের একই রকম ফুসকুড়ি দেখা গেছে বা নিশ্চিত বা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, তাদের মাঙ্কিপক্সের জন্য সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সন্দেহজনক ও লক্ষণযুক্ত রোগীকে কাছাকাছি সরকারি হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে আইইডিসিআরে তাদের সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে হবে।

এ ছাড়াও এর আগে গত ২১ মে শনিবার রাতে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি বন্দরে সতর্কতা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একই সঙ্গে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা ও হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ, যা পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারণত আফ্রিকার দেশগুলোতে এ রোগটি দেখা গেলেও ওই অঞ্চলের বাইরে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। সে কারণেই দেশে দেশে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঙ্কিপক্স খুব একটা গুরুতর নয়। সংক্রমণের সক্ষমতাও তুলনামূলক কম। রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা ও অবসাদ। পরে মুখ ও শরীরে চিকেনপক্সের মতো র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। তবে এ রোগ নিজে থেকেই কেটে যায়। ১৪-২১ দিনের মধ্যে সেরে ওঠেন রোগীরা।

প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় যুক্তরাজ্যে। এরপর ইউরোপের স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেনেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।

ইউরোপের দেশগুলোসহ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ৮০ জনের বেশি লোকের মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ধরা পড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হাজারো রোগী শনাক্ত হলেও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় এত দিন রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত শনিবার সতর্ক করে বলে, মাঙ্কিপক্স আরও ছড়াতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের কাছে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। তবে তারা বলছেন, এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ানোর ও ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে, মাঙ্কিপক্স থেকে সৃষ্ট অসুস্থতা মৃদু। রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকার কথা এখনো বলেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে বিবিসি বলছে, কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে গুটিবসন্তের টিকা সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে। গুটিবসন্তের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের মিল রয়েছে বলে এই টিকা ৮৫ শতাংশ কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

এসএইচ-১৫/২৩/২২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)