দেশের শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় প্রতি চারজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর ১৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন তাদের এক গবেষণার এসব তথ্য বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করে।
নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতা নির্ণয় ও ঝুঁকি যাচাই করা হয় এই গবেষণায়। সেভ দ্য চিলড্রেন এজন্যে গবেষণার অংশ হিসেবে ছোট ছোট বুথ তৈরি করে সেখানে আসা মানুষদের উচ্চ রক্তচাপ ও ঝুঁকি পরিমাপ করেছিল।
এতে দেখা যায় যে, শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ২৩% মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
অন্যদিকে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ৮ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভুগছেন। আর ৩৬ শতাংশ মানুষ স্থূলতার ঝুঁকিতে রয়েছে। চার সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে রংপুরের মানুষদের মধ্যে উচ্চরক্তচাপের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সেভ দ্য চিলড্রেনের পাবলিক হেলথ কমিউনিকেশন্স এর টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “দিন দিন নগরায়নের ফলে আমাদের জীবনযাত্রায় যে ধরণের পরিবর্তন আসছে সেটাই আসলে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার জন্য দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া, দীর্ঘক্ষণ বসে বসে কাজ করা এবং খাদ্যাভ্যাস।”
মানুষ এখন যে ধরণের খাবার খাচ্ছে- সেটিকেই এই রোগের মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেন তিনি।
সংস্থাটির হেলথ এন্ড নিউট্রিশন সেক্টরের পরিচালক লিমা রহমান বলেন, উচ্চরক্তচাপ ও স্থূলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়া বিভিন্ন রকমের চাপ। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যহীন খাবার গ্রহণও এই রোগের উল্লেখযোগ্য কারণ।
তার মতে, উচ্চ রক্তচাপ যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না হয় তাহলে নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বে উচ্চচাপ এবং স্থূলতা এখন সবচেয়ে মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সংকট হিসেবে কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণে না আসলে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক, লিভারের বিভিন্ন সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের কারণেই হয়ে থাকে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে কিডনি জটিলতা, চোখের রক্তনালী ফেটে গিয়ে অন্ধত্ব এবং ব্রেইন স্ট্রোকও উচ্চরক্তচাপের কারণে হতে পারে বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।
জীবন যাত্রায় নানা ধরণের পরিবর্তন যেমন, দেহ সক্রিয় রাখা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং প্রয়োজনে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলেও জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এসএইচ-০১/০২/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)