সৌদির রাজপরিবারে অভ্যুত্থানের চেষ্টা!

সৌদি রাজপরিবারের সদস্যরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যুবরাজকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন-আমিরাতভিত্তিক গণমাধ্যম থেকে এমন দাবি করার পর সেনাবাহিনীকে তলব করার ঘটনা ঘটল। সৌদির অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে রাজধানী রিয়াদে তলব করেছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের বিষয়টি কিছুটা হলেও আমলে নিয়েছেন যুবরাজ। সে কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে রিয়াদে সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে। বর্তমানে জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে আর্জেন্টিনা রয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এমতাবস্থায় দেশটির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে সেনাসদস্যদের রাজধানীতে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে আমিরাতের এক সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি রাজতন্ত্রবিরোধী এক যুবরাজ বলেন, ‘রাজপ্রাসাদে অভ্যুত্থান খুব সন্নিকটে এবং বিরোধীরা যুবরাজের বিরুদ্ধে লড়তে একত্রিত হচ্ছেন।’

যুবরাজ খালিদ বিন ফারহান আল-সৌদ, যিনি বর্তমানে জার্মানিতে নির্বাসন জীবনযাপন করছেন, তিনি বলেন, ‘সৌদিতে ইতোমধ্যে একটি বিরোধী গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেছে। তাদের লক্ষ্য একটাই-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার পদ থেকে সরানো। যুবরাজ খালিদ আমিরাতভিত্তিক দৈনিক আল-খালিজ অনলাইনকে এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সরকার পরিচালনার পদ্ধতিকে ‘অজ্ঞ ও বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন।

যুবরাজ খালিদ বলেন, ‘যদি সৌদি রাজপরিবার ও অন্যান্য দেশ বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে চলতে যায় তাহলে সেখানে সংঘর্ষ বেধে যাবে। কারণ যারাই তাদের বিরুদ্ধে চলতে যাবে তাদের দমনে বর্বর পদ্ধতি বেছে নেয়া হবে। কারণ সৌদি রাজপরিবারতো এভাবেই চলছে।’

‘আমি আশা করি, খুব শিগগিরই সৌদি রাজপরিবারে অভ্যুত্থান হবে এবং বিদ্রোহীরা বিশেষ বিশেষ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। তারপর তারা বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে উৎখাত করবে’-যোগ করেন খালিদ। পশ্চিমা বিশ্বে ‘এমবিএস’ বলে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যুবরাজ মোহম্মদ বাবার মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন-এটাই ছিল সহজ হিসাব-নিকাশ।

সূত্রমতে, শাসক আল সৌদ পরিবারের বেশ কয়েকজন যুবরাজ এবং যুবরাজ মোহাম্মদের চাচাতো ভাইয়েরা উত্তরাধিকারের সারিতে পরিবর্তন চান। তবে তারা এটাও জানেন, ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বেঁচে থাকতে এটা সম্ভব না। প্রিয় পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বাদশাহর যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

এই পরিস্থিতিতে তারা সম্ভাব্য নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। বাদশাহর মৃত্যুর পর তার একমাত্র জীবিত আপন ভাই ৭৬ বছর বয়সী যুবরাজ আহমেদ বিন আবদুলাজিজ সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেন বলে সেই সব আলোচনায় উঠে আসছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, যুবরাজ আহমেদের ব্যাপারে পরিবারের অন্য সদস্য, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যন্ত্র ও কিছু পশ্চিমা শক্তি সমর্থন দিতে পারে।

আড়াই মাস বিদেশে থাকার পর অক্টোবরে দেশে ফিরেছেন যুবরাজ আহমেদ। তার সফরের সময় লন্ডনে তার বাসার সামনে আল সৌদ রাজবংশের পতন চেয়ে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় তিনি সৌদি নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন বলে জানা গেছে।

দুটি সূত্র জানিয়েছে, রাজপরিবারের ৩৪ জন জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে গঠিত অ্যালেজিয়ান্স কাউন্সিলের মাত্র যে তিনজন গত বছর যুবরাজ মোহাম্মদের ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের একজন আহমেদ। সিংহাসনের জন্য ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার মনোনয়নের জন্য গঠন করা হয় এই অ্যালেজিয়ান্স কাউন্সিল।

হাউস অব সৌদে শত শত যুবরাজ রয়েছেন। ইউরোপের রাজপরিবারের মতো সেখানে উত্তরাধিকার হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে ক্ষমতাসীন হন না। রাজ্যের প্রথা অনুসারে, বাদশাহ ও পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা নেতৃত্বের জন্য যাকে যোগ্য মনে করেন, তাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন।

বাদশাহ মারা গেলে বা শাসন করার মতো সক্ষমতা না থাকলে ৩৪ সদস্যের অ্যালেজিয়ান্স কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশ পরিচালিত হবে। সেখানে যুবরাজ মোহাম্মদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদশাহ হওয়ার সুযোগ নেই। সিংহাসনে আরোহণের জন্য তার কাউন্সিলের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

বাদশাহর ইচ্ছা অনুসারে, যুবরাজ মোহাম্মদকে ক্রাউন প্রিন্স করা হলেও বাবার মৃত্যুর পর তাকেই বাদশাহ করা হবে, বিষয়টি তা নয়। মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সৌদি উপদেষ্টাদের আভাস দিয়েছেন যে, সিংহাসনে আরোহণের ব্যাপারে তারা যুবরাজ আহমেদকে সমর্থন দিতে পারেন। আহমেদ ৪০ বছর ধরে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এই আলোচনার ব্যাপারে সরাসরি জানেন-এমন সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের আস্থা রয়েছে যে আর্থসামাজিক যেসব পরিবর্তন এনেছেন এমবিএস, সেগুলোয় কোনো পরিবর্তন আনবেন না যুবরাজ আহমেদ, সামরিক অস্ত্র কেনাবেচার চুক্তি বহাল রাখবেন এবং পরিবারের একতা পুনরুদ্ধার করবেন।

অবশ্য যুবরাজের আর্জেন্টিনা ভ্রমণের আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আর্জেন্টিনার প্রসিকিউটরদের অনুরোধ জানিয়েছে, খাশোগি হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বে হামলার ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে যেন যুবরাজের সালমানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তবে এ বিষয়ে আর্জেন্টিনার প্রসিকিউটররা কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না -তা এখনও স্পষ্ট নয়। বহির্বিশ্বে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যখন এই অবস্থা ঠিক এই মুহূর্তে সৌদি সেনাবাহিনীর সদস্যদের রিয়াদে জড়ো হওয়ার জন্য বলা হলো।

এসএইচ-১৮/০১/১২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র: ডেইলি মেইল)