মাদ্রাসা বন্ধ করছে চীন সরকার

চীনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ঘানচু প্রদেশের ৩৪ বছরের পুরোনো একটি অ্যারাবিক স্কুল (মাদরাসা) বন্ধ করে দিচ্ছে সে দেশের সরকার। সরকারের এমন নির্দেশের ফলে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঘানচু প্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় আবারও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

“পিংলিয়াং অ্যারাবিক মাদরাসা” নামের এ মাদরাসাটি স্থানীয় মানুষের স্বেচ্ছাদানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছিল এতদিন। কিন্তু সরকারি শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এ স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যার যার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

পিংলিয়াং শহরটি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঘানচু ও শানজি প্রদেশের সীমান্তবর্তী একটি শহর। চীনের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকার একটি এটি। এ প্রদেশে মুসলিমদের সংখ্যা বেশ সন্তোষজনক।

‘শিক্ষা অধিদপ্তরের লোকজন মাদরাসা বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথাই বলতে চান না।’ বলছিলেন মাদরাসার একজন শিক্ষক। ‘আমাদের মাদরাসার ছাত্ররা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। এখানে ধর্মীয় মাধ্যমে পড়াশোনা করে তারা আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে থাকে। এখান থেকে পাশ করার পর তারা মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দোভাষীর কাজ করে। যদি মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাদের পড়াশোনার আর কোনো উপায় থাকবে না এবং তারা একদম পথে বসে যাবে।’

মাদরাসাটি রক্ষা করার জন্য শিক্ষকরা ইতোমধ্যে এলাকার গণ্যমান্য ১,০০০ ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহ করে শিক্ষা ব্যুরো বরাবর একটি পিটিশন পাঠিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা মাদরাসাটি রক্ষা করতে পারবেন কি-না, সে ব্যাপারে তেমন কোনো আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারছেন না কেউই।

চীনের মুসলিম অধ্যুষিত অনেক এলাকায় বোরকা ও হিজাব নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের সরকার

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একজন সাংবাদিক যখন ঘানচু প্রদেশের নিংজিয়া এলাকায় যান তখন দেখতে পান, সেখানকার বাড়ি-ঘর এবং রাস্তাঘাট থেকে ইসলামি ছবি বা আরবিতে লেখা সড়কের নামগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। তিনি স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এলাকার মসজিদগুলোতে চলতে থাকা ধর্মীয় শিক্ষাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক মাদরাসাও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাদরাসাশিক্ষক বলছিলেন, ‘এখানে ইসলামি সংস্কৃতির সকল নিদর্শন মুছে ফেলার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে চীনা সরকার। স্থানীয় মুসলিমদের অনেকেই সড়কের নাম, পণ্য বা রেস্তোরাঁয় আরবি নাম ব্যবহার করতো। বিশেষত খাবারের প্যাকেট আরবি অক্ষরে ‘হালাল’ লেখা থাকতো। প্রশাসন এসব লিখতেও নিষেধ করেছে।

নারীদের মাথায় হিজাব পরা কিংবা পুরুষদের বড় দাড়ি রাখাও নিষিদ্ধ এখানে। মোটকথা ইসলাম বা মুসলিম সংস্কৃতিকে ধারণ করে এমন সকল নিদর্শনই ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে প্রশাসন, যাতে করে ভবিষ্যত মুসলিম প্রজন্ম পূর্বপুরুষদের ইসলামি সংস্কৃতি ভুলে বড় হতে পারে ‘মহান চীনের’ কম্যুনিস্ট সংস্কৃতির ছায়ায়।

গত আগস্ট মাসে নিংজিয়া এলাকার প্রশাসন টংজিন এলাকার ওয়েইঝো গ্র্যান্ড মসজিদ ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করে। কারণ, মাত্র একশ জন স্থানীয় হুই মুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিল সেখানে।

এসএইচ-১৩/১২/১২ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট)