থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারাচ্ছেন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের জেরে নিজ দলের আস্থা ভোটের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হাউস অব কমন্সে এ ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব হারাতে হবে থেরেসাকে। দেশটির ক্ষমতাসীন এই দলের বিধান অনুযায়ী দলীয় প্রধানের পদ হারালে প্রধানমন্ত্রীর পদও ছাড়তে হবে থেরেসাকে।

নিজ দল থেকেই আস্থা ভোটের ডাক আসায় শঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছে যে, তবে কী থেরেসার বিদায় ঘণ্টা বাজছে? কী বলছে কনজারভেটিভ পার্টির বিধান।

কনজারভেটিভ দলীয় পার্লামেন্টের সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৫ শতাংশ সদস্য আস্থা ভোটের আহ্বান জানিয়ে দলটির ‘১৯২২ কমিটির’ চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লিখেছেন। এই কমিটি দলটির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে।

পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছে ৩১৫ জন। আর এ ধরনের আস্থা ভোট অনুষ্ঠানের জন্য ৪৮ জন সংসদ সদস্যের চিঠি লেখার প্রয়াজন হয়।

কখন এই ভোটাভুটি?

১৯২২ কমিটির চয়োরম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি। তিনি বলেছেন, বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। হাউস অব কমন্সের ১৪ নাম্বার কক্ষে গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন সংসদ সদস্যরা। তাৎক্ষণিকভাবেই ভোটগণনা শুরু হবে। সন্ধ্যার কিছু পরেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

আস্থা ভোটের সময় কী ঘটে?

কনজারভেটিভ দলীয় সব সংসদ সদস্যই ভোট দিতে পারবেন। জয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের প্রয়োজন অর্ধেকের বেশি ভোট। যদি সব সংসদ সদস্য ভোটপ্রদান করেন, তাহলে থেরেসার জয়ের জন্য লাগবে ১৫৮ ভোট।

যদি তিনি জয় লাভ করেন, তাহলে তিনি দলের প্রধান হিসেবে আগামী এক বছর দায়িত্ব পালন করবেন। এই এক বছরের মধ্যে আর এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন না তিনি। তবে যদি হেরে যান, তাহলে তাকে অবশ্যই দলীয় প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে এবং এরপরে দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এদিকে, দলের ভেতরের তাৎপর্যপূর্ণ বিদ্রোহ তার নেতৃত্বের ভীত কাঁপিয়ে দিতে পারে।

থেরেসা হারলে কী ঘটবে?

থেরেসা মে হেরে গেলে, তার জায়গায় নতুন নেতৃত্ব আনার জন্য আবারও ভোটাভুটি হবে। থেরেসার বিকল্প হিসেবে যিনি দলীয় প্রধান নির্বাচিত হবেন; তিনি দলীয় বিধান অনুযায়ী দেশটির প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচিত হবেন। এর ফলে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না।

তবে দলীয় প্রধানের পদের জন্য যদি একাধিক প্রার্থী লড়াই করতে চান তাহলে হাউস অব কমন্সে কনজারভেটিভ দলীয় এমপিরা গোপন ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন। এই ভোটে যারা কম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বহিস্কার করা হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী প্রতিদ্বন্দ্বিরা আবারো ভোটে অংশ নেবেন। সেখান থেকে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দু’জন আবারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন; সংসদ সদস্যরা এই দুজনের মধ্যে একজনকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করবেন।

পরে ডাক যোগে এই দুই সদস্য কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের কাছে ব্যালট পাঠাবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সর্বোচ্চ তিন মাসের দলীয় সদস্যপদ থাকতে হবে। এরপর এই দু’জনের মধ্যে থেকে একজনকে দলীয় প্রধান করা হবে; আর তিনিই হবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে কতদিন লাগতে পারে?

২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বেক্সিট ইস্যুতে ভোটাভুটি হওয়ার পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন থেরেসা মে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় নিজ দলের ভেতরেও সমালোচনায় পড়েন তিনি।

থেরেসা মে যদি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলেন; তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানই ক্ষমতাবলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। আর এই প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ হতে প্রায় ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

এসএইচ-১৬/১২/১২ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি)