মুসলিম যুবকের রক্তে প্রাণে বাঁচলেন এক হিন্দু

সম্প্রীতির নজির গড়ল ভারতের কালনায়। জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু ভাইকে বাঁচাতে রক্ত দিলেন এক মুসলিম যুবক। কিডনির সমস্যা হয়েছিল সমুদ্রগড়ের বাসিন্দা উত্তম হালদারের। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারেন তার কিডনির সমস্যার কথা।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে রক্ত নিতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এ নেগেটিভ রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে মিসবাউল শেখ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত পান তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে কালনা হাসপাতালে রক্ত নেওয়া হয় মিসবাউল শেখের। তারপরই সেই রক্ত পেয়ে সুস্থ হন উত্তমবাবু। স্থানীয়রা বলছেন, সম্প্রীতির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন মিসবাউল।

অসুস্থ উত্তমবাবুর মা শোভারানি দেবী জানান, কয়েক বছর আগেই তার ছোট ছেলের মৃত্যু হয়। সেও রোগে ভুগে মারা গেছেন। তার কিছুদিন পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উত্তম। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। শরীর ফুলে যাচ্ছিল। ডাক্তার দেখিয়েও কোনও ফল হয়নি।

অবশেষে পনেরো দিন আগে দক্ষিণ ভারতে তিনি চিকিৎসা করাতে যান। সেখানেই চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে রক্তের উৎপাদন কম হচ্ছে। তার রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু রক্ত না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েন তিনি। ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করেও রক্ত পাননি।

চারিদিকে খোঁজ শুরু হয়। স্থানীয় বন্ধুরা তার হয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালায়। তাতেও সাড়া মেলেনি। কালনায় ফিরে এসে স্থানীয় সমাজসেবী শ্যামল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় ব্লাড ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। পরে পুরনো রেজিস্টার খাতা দেখে জানা যায় যে, সমুদ্রগড়ের বাসিন্দা মিসবাউলের রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। তারপরেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

এক কথাতেই রাজি হন মিসবাউল। শ্যামলবাবু বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেন আমাদের সমাজে জাতপাতের ভেদাভেদ রয়েছে। কিন্তু আজ প্রমাণ হল আমাদের সমাজে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা সকলে সকলের জন্যে। হাসপাতালে রক্ত নিতে নিতে মিসবাউলের হাতে হাত রেখে উত্তম বলেন, মিসবাউলবাবুর সঙ্গে আগে কখনও পরিচয় হয়নি।

কোনও কিছু না ভেবেই তিনি আমার জন্য রক্ত দিতে ছুটে এলেন। আমার প্রাণ বাঁচালেন। আমি ও আমার পরিবারের সঙ্গে তাঁর একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি হল একই কথা বলেছেন উত্তমের মা শোভারানি দেবীও। মিসবাউলের বক্তব্য, আমাদের সকলের রক্তই এক। এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। আজ আমি উত্তমবাবুকে রক্তে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। আগামী দিনে তিনি আমার পাশে দাঁড়াবেন। এটাই মানবিকতার পরিচয়।

এসএইচ-১৭/১৪/১২ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক)