ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে ভারতে অবস্থানরত আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে কয়েক দিনে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। গত সপ্তাহে ৫ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত।

এদিকে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো জোর করে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কড়া সমালোচনা করেছে । তারা বলছে, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ভয়াবহতার মধ্যে ফেরত পাঠিয়ে ভারত আন্তর্জাতিজ আইনের প্রতি অমর্যাদা করছে।

এএফপি জানায়, ভারতে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।এরই মধ্যে দু’দফায় জোর করে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন মিয়ানমারে রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেখানকার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে এবং তা অব্যাহত আছে- এমন রিপোর্ট করা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদেরকে সেই মিয়ানমারের হাতেই তুলে দিচ্ছে ভারত। তারা ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করেছে ২৩০ রোহিঙ্গাকে। সেখানে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা এসব রোহিঙ্গাকে সদলবলে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, গত সপ্তাহে ভারত থেকে পালিয়ে আসা কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে আটক করেছেন তারা। তাদেরকে বাংলাদেশের দক্ষিণে শরণার্থীদের শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই শিবিরগুলোতে কঠিন জীবনযাপন করছে বাস্তুচ্যুত ও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশী কর্মকর্তারা বলছে, ভারতে যেভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে তার জন্যই ভারত থেকে এভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ব্রাহ্মণপাড়ার পুলিশ প্রধান শাহজাহান কবির আটক রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারত যখন আটক করা শুরু করে এবং তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে থাকে তখন থেকেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, গত বৃহস্পতিবারেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর আটক করা হয়েছে ১৭ রোহিঙ্গাকে।

তাদেরকে সীমান্তের ৩১টি পয়েন্ট থেকে আটক করা হয়। এদের বেশির ভাগই ভারতে বসবাস করছিলেন ৬ বছর ধরে। ওদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের শিবিরে ঠাসাঠাসি অবস্থা। সেখানে ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্টের পর আশ্রয় নিয়েছেন কমপক্ষে ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। সেখানকার স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, এরপরও গত কয়েকদিনে এসেছেন কমপক্ষে ৫৭ জন রোহিঙ্গা। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের প্রশাসক রেজাউল করিম সর্বশেষ যাওয়া রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বলেন, তারা এসেছেন হায়দরাবাদ, জম্মু-কাশ্মিরের মতো এলাকা থেকে।

উল্লেখ্য, হায়দরাবাদ হলো ভারতের দক্ষিণের বড় শহর। আর জম্মু-কাশ্মির হলো ভারত নিয়ন্ত্রিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা।

এসএইচ-১১/০৯/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র : এএফপি)