সৈন্য বাড়াচ্ছে মিয়ানমার, পাল্টা জবাবের হুমকি বিদ্রোহী নেতার

আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল তুন মিয়াত নেইং বলেছেন, ৪ জানুয়ারির ভয়াবহ হামলার পর বুথিয়াডং রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে। ফলে রাখাইন রাজ্যে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ইরাওয়ার্দি পত্রিকায় এই বিদ্রোহী নেতার সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হয়।

আরাকান আর্মি প্রধান বলেন, আজকেও রাখাইন রাজ্যে প্রচুর সেনা মোতায়েন করতে দেখেছি। তারা আকাশ ও স্থলপথে আসছেন। স্বাভাবিকভাবেই দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের আশঙ্কা করছি আমরা।

গত শুক্রবার দেশটির স্বাধীনতা দিবসের ভোরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র আরাকান আর্মির সদস্যরা। তাদের হামলায় মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বিজিপির ১৩ সদস্য নিহত হন।

দ্য আরাকান আর্মির দাবি, ওই হামলায় তাদেরও দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যে গত ডিসেম্বর থেকেই আরাকান আর্মি ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ জোরদার হতে থাকলে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। এখানে বৌদ্ধ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে আরাকান আর্মি।

হামলার পর গত ৭ জানুয়ারি দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে এক বিরল বৈঠকে বসেন সু চি। মিয়ানমার পুলিশের ওপর বিদ্রোহীদের হামলার বিষয়ে আলোচনার সময় তার প্রশাসন সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহীদের দমন করতে বলেন।

মিয়ানমার সরকারের প্রধান অং সান সু চি সেনাবাহিনীকে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহীদের ‘গুঁড়িয়ে’ দিতে বলেছেন বলে জানিয়েছে সরকারের একজন মুখপাত্র।

আরাকান আর্মির প্রধান মেজর জেনারেল তুন মিয়ত নেইং অভিযোগ করেন, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের (আরাকান আর্মি) বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষকে রাতের বেলা টহল দিতেও বাধ্য করছে।

‘আমরা তাদেরকে ছাড়ব না, পাল্টা জবাব দেব,’ বলেন এই বিদ্রোহী নেতা।

তিনি বলেন, ‘আরাকানের জনগণকে আর শোষিত হতে দেব না’।

ইরাওয়ার্দির খবরে বলা হয়, গত ডিসেম্বর থেকে সশস্ত্র সংঘাত বাড়ার পর থেকে মিয়ানমারের বিজিপি সাধারণ নাগরিকদের জঙ্গলে বিদ্রোহীদের আস্তানার খোঁজে পথ দেখিয়ে দিতে বাধ্য করছে। এছাড়া সাধারণ নাগরিকদেরকে খাদ্য সরবরাহ করতেও বাধ্য করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

রাখাইনের পশ্চিমে সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের কারনে গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আরাকান আর্মি বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবী জানিয়ে আসছে।

অন্যদিকে, রাজ্যটিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার রক্ষা করছে বলে দাবী করে।

২০১৭ সালে উত্তর রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালানোর পর মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান শুরু করে। এরপর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। মিয়ানমারের সরকার আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

এসএইচ-১৮/১০/১৯ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক)