মিয়ানমারের কারাবন্দি সাংবাদিককে সাহস যোগাচ্ছেন স্ত্রী

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের সত্য তুলে ধরে মিয়ানমারের শাসকগৌষ্ঠীর তোপের মুখে পড়ে গ্রেপ্তার রয়টার্সের সাংবাদিক কিয়াও সোয়ের স্ত্রী চিত সু উইন লড়ে যাচ্ছেন স্বামীর জন্য। স্বামী জেলে যাওয়ার পরে নিজের সমাজে তিনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন আর একা হিসেবে আবিস্কার করেন।

একমাত্র মেয়েকে সামলানোর পাশাপাশি স্বামীর জন্য অক্লান্ত আইনি লড়াই করতে হচ্ছে একাই। তিনি মনে করেন, তার স্বামী সত্যের পথে অবিচল, আর যা ঘটেছিল কর্তব্য অনুযায়ী তাই তুলে ধরেছেন। কারাগারে স্বামী যেন মনোবল না হারান তাই তিনি প্রতিনিয়ত তাকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করছেন।

বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে সু উইন জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের সেই ভয়ঙ্কর রাতে স্বামীর সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিলেন। স্বামী তাকে বলেছিলেন কাজ শেষ করতে দেরি হলে চিন্তা না করতে। কিন্তু বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হলেও স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তিনি। বহুবার মোবাইল ফোনে কল করেও কোনও সাড়া পাচ্ছিলেন না। এরপর একবছর ধরে তার স্বামী নিখোঁজ থাকে।

চিত সু উইন বলেন, ‘আমার ভয় হতো পরিবার বিচ্ছিন্নতায় তিনি (স্বামী) হয়তো বিষন্ন হয়ে যাবে, কাতর হয়ে পড়বে বাড়ি ফিরতে না পারার কারণে। তাকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করতাম। বিষন্ন হতে দিতাম না।’

‘আমার স্বামী আমাকে বলেছে, কারাগারে তিনি শক্ত থাকার চেষ্টা করে কিন্তু পরিবার ছেড়ে থাকতে হওয়ায় সে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। সন্তানের আঁকাআঁকি, হাসি-কান্নাকে সে খুব মিস করছে।’

পরে সুকে জানানো হয়, ১০ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশের দেওয়া কিছু সরকারি নথি বহনের অপরাধে আরেক সাংবাদিকের সঙ্গে ২৮ বছল বয়সী তার স্বামীকেও আটক করা হয়েছে। পরে গণমাধ্যমে খবর আসে, রাখাইনের ইন দিন গ্রামে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত এক গণহত্যার চিত্র তুলে ধরতে গিয়েই কারাভোগ করতে হচ্ছে রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিককে।

২০১৮ সালে রয়টার্সের এই দুই সাংবাদিককে সাত বছর করে কারাদ- দেয় ইয়াঙ্গুনের জেলা আদালত। ওই বছরের নভেম্বরে হাইকোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করা হলেও গত ১১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন এই দুই সাংবাদিক। তবে সেই আপিল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

এসএইচ-২০/০৯/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)